ভ্যাট অডিট প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকরদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা যাবে নাযাদের আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্য সাড়ে ৫৭ বিলিয়ন ডলার এস আলমের লাখ কোটি টাকা ঋণ, ব্যাংকে জমা ২৬ হাজার কোটি
No icon

২ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক মোহাম্মেদ আদনান ইমাম। নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগে চরম বিতর্কিত এনআরবিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান তিনি।

‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ হিসাবে তাকে সিআইপি মর্যাদা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর্থিক খাতের লুটেরাদের অন্দর মহলে ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল’ হিসাবে পরিচিত এই আদনান মাত্র ৩ বছরেই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। কাগুজে কোম্পানি খুলে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পাচার করেছেন বিদেশে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শ্বশুরবাড়ির গৃহকর্মীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজিয়ে জালজালিয়াতির মাধ্যমে খোলা ‘টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি’ নামে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন আদনান। আর ১২০ কোটি টাকার সরকারি কাজের বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ তুলে পাচার করেছেন বিদেশে।

অভিযোগ আছে, আদনান ইমামের এই লুটপাটের সহযোগী ছিলেন-এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, ইউসিবি ও পদ্মা ব্যাংকের কয়েকজন প্রভাবশালী। এরা মিলে মূলত ব্যাংক ও শেয়ার বাজারে লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। এই সিন্ডিকেটের হাত ধরে দুবাই ও যুক্তরাজ্যে খোলা বহু কোম্পানির মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তা বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য নিতে মোহাম্মেদ আদনান ইমামের মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বনানীতে অবস্থিত তার প্রতিষ্ঠান এডব্লিউআর কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। দেশে তার কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিও শতকত হোসেন। বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি।

জানা যায়, বিদেশে অর্থ পাচার কাণ্ডে অনেক আগেই জড়িয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আদনান ইমামের নাম। সাবেক এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের অর্থ পাচার কাণ্ডে এদের সংশ্লিষ্টার অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০২১ সালে কুয়েতের আদালতে সাজা হওয়ার পর পাপুল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করে দুদক। কিন্তু পাপুলের অর্থ পাচারের হোতা পারভেজ ও আদনানকে ছাড় দেওয়া হয়।

এছাড়া গত বছরের ১১ জুলাই পৃথক ঘটনায় দুদক এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করলেও আর্থিক প্রভাবের কারণে এরা দুজনই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রতারণামূলক আসামিরা ব্যাংক থেকে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং ইক্সোরা অ্যাপারেলস নামে একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরির নাম ব্যবহার করে ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা পাচার করেছেন। অভিযোগ আছে, এই কোম্পানি দখল করে নিয়েছেন আদনান ইমাম।

নাম পরিবর্তন করে ‘ভাইব্রোনিয়াম লিমিটেড’ নামে এখন ইক্সোরার কার্যক্রম চলছে। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান আদনান ইমামের আরেক প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিসের কোম্পানি সেক্রেটারি বদরুল হাসান পাটোয়ারী। এই বদরুল হাসানই টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর খোরশেদ আহমেদের (আদনানের শ্বশুরবাড়ির গৃহকর্মী) জাল সই দিয়ে থাকেন। ইউসিবি ব্যাংক থেকে ৪০০ কোটি টাকার ঋণপত্রেও জাল সই দেন তিনি।

ইক্সোরার সঙ্গে আদনান ইমামের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ থাকার পরও রহস্যজনক কারণে এই মামলায়ও ছাড় পান আদনান। জানা গেছে, খোরশেদ আলম এক সময় একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। আদনানের শ্বশুর খোরশেদের নামে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ায় তার চাকরি চলে যায়। এরপর আদনানের শ্বশুরের বাড়িতে কাজ নেওয়া খোরশেদ ভুয়া কোম্পানির ঋণ জালে জড়িয়ে যান।

জানতে চাইলে টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির কাগুজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর খোরশেদ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার নামে কোম্পানি খুলে কিভাবে তারা এত টাকা ঋণ নিয়েছে তা আমার জানা নেই। কে আমার হয়ে সই করে আমি কিছুই জানি না। এটুকু বলতে পারি আমি কোনো দিন ব্যাংকে যাইনি। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। আপনারা সবই বোঝেন। আপনার সঙ্গে কথা বলেছি এটা জানলেও আমার বিপদ। কাজেই আমি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।’

এডব্লিউআর কোম্পানির আইন শাখার প্রধান বদরুল হাসান পাটোয়ারী বলেন, ‘টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি এই কোম্পানির কোনো ডকুমেন্টে সই করিনি।’

এডব্লিউআরসহ আদনানের বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কিনা-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে চিনি না। আপনি এসব জানতে চাইলেই জানাব কেন। এসব বিষয় নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’

কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করলেও টিএসএনের সঙ্গে মেসার্স সিদ্দিক সাপ্লায়ার্সের একটি সাব-কন্ট্রাক্ট চুক্তিপত্র দলিলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে মীর খোরশেদ আহমেদ সই করেন। এই দলিলে ১ নম্বর সাক্ষী হিসাবে সই করেন বদরুল হাসান।

যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩ বছরে আদনান ইমাম তার কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নামে-বেনামে বহু কাগজে কোম্পনি খুলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি। জালজালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিপুল অঙ্কের এই টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৮ সালে ডিআইটি রোড, ডাবল মুরিং চট্টগ্রামের ঠিকানায় টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের কোম্পানি খোলেন আদনান।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নাম দেওয়া হয় আদনানের শ্বশুরের গৃহকর্মী মীর খোরশেদ আহমেদের। তবে কোম্পানির সব ডকুমেন্টে তার হয়ে সই করেন আদনানের কোম্পানি এডব্লিউআরের আইন শাখার প্রধান বদরুল হাসান পাটোয়ারী। এই কোম্পানির নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) বনানী ১১ নম্বর শাখা থেকে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বসুন্ধরা আবাসিকের ১০ কোটি টাকা দামের ৫ কাঠা জায়গার দলিল থার্ড পার্টি মর্টগেজ হিসাবে জমা দিয়ে লোপাট করা হয়েছে বিপুল অঙ্কের এই অর্থ। ব্যাংকের চেকসহ কোম্পানির সব ডকুমেন্টে সাজানো ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হয়ে সই করেন বদরুল। এই দুর্নীতিতে বনানী শাখার তৎকালীন প্রধান মহিউদ্দিন খান ও ব্যাংকটির প্রভাবশালী কয়েজন জড়িত। এক সপ্তাহ আগে দুর্নীতির অভিযোগে মহিউদ্দিন খানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ভুয়া কোম্পনির নামে এই বিপুল অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করাসহ নানা দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আসলে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে বনানী ১১ নম্বর শাখার ম্যানেজার মহিউদ্দিন খানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে মহিউদ্দিন খান মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন আকস্মিকভাবে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে। ৫ আগস্টের আগে দৃশ্যপট আর পরের দৃশ্যপট এক না। ৫ আগস্ট অপ্রত্যাশিতভাবে সরকার পতনের পর মানুষের সুরও পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমরা এখন পরিস্থিতির শিকার। আপনার কাছে যে ইনফরমেশন আছে তা আংশিক সত্য।’

পুরো সত্যটা তাহলে কি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে এভাবে সব তথ্য আপনাকে দিতে পারব না।’ তথ্য প্রাপ্তির জন্য এ প্রতিবেদক তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি এড়িয়ে যান।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বাগেরহাটে নৌবাহিনীর ৮৩ খাল খনন প্রকল্পের ৫৩০ কোটি টাকার কাজ পায় আদনানের কোম্পানি এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্ট বিডি লিমিটেড। এই কাজের কার্যাদেশের বিপরীতে ইউসিবি ব্যাংক কাওরান বাজার শাখা থেকে ৭০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজের দরের চেয়ে ১৭০ কোটি টাকা বেশি ঋণ অনুমোদনের নেপথ্যে ছিলেন কাওরান বাজার শাখার ম্যানেজার আলমগীর কবির অপুসহ ব্যাংকটির আরও কয়েকজন প্রভাবশালী। আরও বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে খাল খনন কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় এডব্লিউআরের সঙ্গে ৪১০ কোটি টাকার কাজের চুক্তি বাতিল করে নৌবাহিনী।

এ হিসাবে মাত্র ১২০ কোটি টাকার কাজ করে আদনানের কোম্পানি। অথচ এই তথ্য গোপন করে আগের অনুমোদিত পুরো ৭০০ কোটি টাকা তুলে বিদেশে পাচার করে আদনান ও তার সহযোগীরা। এডব্লিউআর ড্রেজারের নামে ইউসিবি ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখা থেকে দুটি ড্রেজার কেনা বাবদ ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। ৮০ কোটি টাকায় ড্রেজার দুটি কেনা হলেও ওভার ভ্যালুয়েশন দেখিয়ে ঋণ দেওয়া হয় দেড়শ কোটি টাকা।

জানা গেছে, আদনান প্রতারণার মাধ্যমে শুধু ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেননি। এই প্রতারণার খপ্পরে সাব-ঠিকাদারের ৩ কোটি টাকাও আটকে গেছে। বিলের চেক তার কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা দিলে নগদায়ন করে তা ঠিকাদারকে দেওয়া হয়নি। এই প্রতারণার অভিযোগ গড়িয়েছে থানা পর্যন্ত।

জানতে চাইলে ঠিকাদার টিএম আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এডব্লিউআর নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক আদনান চাকর-বাকর, কেয়ারটেকার, ড্রাইভারদের নামে একাধিক কোম্পানি খুলেছেন। ওইসব কোম্পানির নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত শত কোটি টাকার কাজ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে বিদেশে পাচার করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ চুক্তি মোতাবেক শেষ করেননি। আমি নিজেও তার সঙ্গে সাব-কন্টাক্ট্রে কাজ করে প্রতারিত হয়েছি। তার কাছে আমার ৩ কোটি টাকা পাওনা আছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, আদনানের আইটি খাতের কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড ও আইটি খাতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের নামে ওয়ান ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়া হয়নি। পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার কারসাজি করেও শত শত কোটি টাকা বাজার থেকে সরিয়ে পাচারের অভিযোগ আছে আদনান চক্রের বিরুদ্ধে। এনআরবিসি ব্যাংক থেকেও নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ আছে।

এছাড়া আদনানের কাগুজে কোম্পানি অর্ণিতা এগ্রোর নামে ১০ কোটি, এনইএস ট্রেডিংয়ের নামে ৩০ কোটি ও লান্তা সার্ভিসের নামে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে লোপাট করা হয়েছে। আর এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক হিসাবে প্রভাব খাটিয়ে নিজের ব্যাংক থেকে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কোম্পানির নামে কোনো মর্টগেজ ছাড়াই ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ওই চক্রটি ব্যাংক থেকে লোপাট করা টাকা দিয়ে বেনামে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড কিনে নিয়েছে বলে গুঞ্জন আছে।

কে এই আদনান : জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা আদনান ইমাম। বাবা চাকরি করতেন একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে। ৯০-এর দশকে এ-লেভেল শেষে পড়াশোনা করতে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন। শিক্ষা জীবন পার করে তিনি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নেন। সেখানে তার পূর্বপরিচিত ওয়েন ও রিচার্ড নামের দুই ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে আবাসন ব্যবসার পরিকল্পনা করেন।

২০০৭ সালে ওয়েন ও রিচার্ডকে নিয়ে দেশে এসে তিনজনের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে ‘এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্ট বিডি লিমিটেড’ নামে আবাসন ব্যবসার কোম্পানি খোলেন। ওয়েন ও রিচার্ড এই কোম্পানিতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করলেও শেষ পর্যন্ত ধূর্ত আদনানের কাছে প্রতারিত হন তারা। পুঁজি হাতিয়ে তাদের কোম্পানি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এডব্লিউআরের অধীনে ঢাকায় অন্তত ২০টি আবাসন ভবন নির্মিত হয়েছে। কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। ৩ বছরের প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ১০ বছরও সময় নেওয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকরা চরমভাবে প্রতারণার শিকার হন।

আবার নির্মাণ চুক্তির পরই প্রতিটি ভবন তৈরির জন্য ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয়েছে। যার বেশিরভাগই ফেরত দেওয়া হয়নি। বসুন্ধরা আবাসিকে ১০ কাঠার ওপর ১২ তলা ‘এডব্লিউআর ম্যালিন্ডা’ নামে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে বিপুল টাকা ব্যাংক নিয়ে ফেরত না দেওয়ায় ১২ বছর আগে কেনা অ্যাপার্টমেন্ট এখনো রেজিস্ট্রেশন নিতে পারছেন না গ্রাহকরা।