শুধু অতিরিক্ত শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়ে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে বুধবার সংস্থাটির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।সম্প্রতি সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে শুল্ক্ক কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে এনবিআর কী ভাবছে জানতে চাইলে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, শুধু গ্যাস নয়, বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে অনেকে শুল্ক্ককে দায়ী করেন। কিন্তু পণ্যমূল্য বা ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে পণ্য উৎপাদনে অদক্ষতা, অপচয় কিংবা কোনো সিন্ডিকেশন আছে কিনা- তা খতিয়ে দেখা হয় না। পণ্যমূল্য বাড়লে আয়কর, ভ্যাট কিংবা আমদানি শুল্ক কমানোর প্রসঙ্গটিই প্রথমে আসে। কিন্তু এনবিআর বিভিন্ন সময় পর্যালোচনা করে দেখেছে পণ্যমূল্য বাড়ার জন্য শুধু শুল্ক্ক বা কর দায়ী নয়। তাই পণ্যমূল্য বাড়লেই কর কমাতে হবে- এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চান তিনি।বিলাসী পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাব বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শুল্ক্ক বাড়ানো-কমানোর কাজ এনবিআরের। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়েই সেই কাজটি করা হয়। শুল্ক্কহার বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষেত্রে ডলার সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় কিনা কিংবা চোরাচালান বাড়ে কিনা- এসব বিষয়ও পর্যালোচনা করতে হয়। এসব বিশ্নেষণ করে যেসব পণ্যে শুল্ক্ক বাড়ানো দরকার সেগুলোতে ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে আগামীতে আরও বাড়ানো হবে। কিন্তু কোনো সংস্থা তালিকা ধরিয়ে দিলেই সব ক্ষেত্রে শুল্ক্ক বাড়ানো সম্ভব হয় না বলেও যোগ করেন তিনি।
ডলার সাশ্রয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশি সাশ্রয় করতে গিয়ে যদি কাঁচামাল আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি প্রভাব পড়বে। তাই আতঙ্কিত হয়ে ডলার সাশ্রয় করার বিষয়ে ঢালাওভাবে উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসব পণ্য খুব বেশি প্রয়োজন নেই, সেগুলোর আমদানি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কিন্তু এনবিআর একেবারে তা বন্ধ করে দিতে পারে না। তাই এসব ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়।দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আরও বাড়াতে পাঁচ বছর আগে হাতে নেওয়া ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এর কাজ দ্রুতগতিতেই চলছে। তবে ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হবে না। কারণ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হতে অনেক দেরি হয়েছিল। তাই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা ভাটা পড়লেও চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাস্টমস খাত থেকে রাজস্ব আদায়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত কাস্টমস থেকে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয় ৮৯ হাজার ৪২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।