বাজারে দর নিয়ন্ত্রণে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল বুধবার এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে সংস্থাটি। যদিও এর আগেই শুল্ক কমানোর খবরে চিনির দর কিছুটা কমেছে বাজারে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানো হচ্ছে এ খবরে বাজারে দর কমতে শুরু করেছে। গত দুই দিনে প্রতিমণে দর কমেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এতে খুচরা পর্যায়ে চিনির কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। দুই দিন আগে চিনির কেজি ছিল ১২৮ থেকে ১৩৫ টাকা। তবে গতকাল বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে চিনির কেজি বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা।সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে গত এক মাসে চিনির দর ২ শতাংশের মতো বেড়েছে। দর নাগালে রাখতে গত ৬ অক্টোবর চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে এনবিআরকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। পাশাপাশি চিনি চোরাচালান বন্ধে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শও দেয় সংস্থাটি। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে শুল্ক কমানো হয়েছে।
এনবিআর গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে বাংলাদেশি মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে শিশুখাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে বিভিন্ন পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এনবিআর সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কর ছাড়ের মাধ্যমে চিনির বাজারদর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান রেগুলেটরি ডিউটি ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির ওপর শুল্ককর ১১ দশমিক ১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির ওপর শুল্ককর ১৪ দশমিক ২৬ টাকা কমানো হয়েছে। এতে যে পরিমাণ শুল্ক কমানো হয়েছে তার সমপরিমাণ চিনির দাম কমে আসবে। পাশাপাশি শুল্ককর কমানোর ফলে অবৈধ পথে চিনির চোরাচালান নিরুৎসাহিত হবে। বৈধ উপায়ে আমদানি বাড়বে। এতে শুল্ককর আদায়ের পরিমাণও বাড়বে।
প্রতি টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ককর ছিল মোট ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ এবং অগ্রিম কর ৫ শতাংশ। এর মধ্য থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমে হয়েছে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া অপরিশোধিত প্রতি টনে কাস্টমস ডিউটি রয়েছে ৩ হাজার টাকা আর পরিশোধিত চিনিতে রয়েছে ৬ হাজার টাকা।আমদানি শুল্ক কমানোর এ সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল কয়েকজন চিনি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি পাইকারি বাজারে চিনির বস্তায় প্রায় ২০০ টাকার মতো বেড়ে যায়। বেড়ে যাওয়া দর কমতে শুরু করেছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম সমকালকে বলেন, দুই দিন আগে পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৫০ টাকা, যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩১০ টাকায়। গত দুই দিনে প্রতি মণে দর কমেছে ২৪০ টাকার মতো। সামনে হয়তো আরও কমতে পারে।ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ২৮ হাজার টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার টন। গত অর্থবছরে আমদানি কমে প্রায় ৪ লাখ ৫৭ হাজার টন। আমদানি কমলেও রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১২৮ কোটি ৬৭ হাজার টাকা। এর কারণ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়ে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির আমদানি মূল্য ছিল ৪৮ হাজার ১৩১ টাকা। পরের অর্থবছরে ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে প্রতি টনের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৬৫ হাজার ৭৬ টাকা। বিশ্ববাজার ও ডলারের দর বাড়ার কারণে চিনির আমদানি মূল্য বেড়ে যায়, যার ফলে দেশের বাজারেও চিনির দর বেড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ট্যারিফ কমিশন মত দেয়, বিশ্ববাজারের দর ও ডলারের দর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে শুল্ক কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।