করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে কয়েক দফায় ৫ মে পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কার্যকর আছে লকডাউনও। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের কোনো কোনো জেলা-উপজেলায় আবার পুরোপুরি লকডাউন চলমান। এ কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী আমদানি করা পণ্য বন্দর থেকে নিয়ে যেতে পারছেন না। তাই লকডাউন থাকা অবস্থায় কন্টেইনার ডিটেনশন চার্জ মওকুফ করে বুধবার (২৯ এপ্রিল) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নৌ-পরিবহন অধিদফতর। তবে এ প্রজ্ঞাপন জারির একদিন পরই আজ (বৃহস্পতিবার) এটি বাস্তবায়নে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে নৌ-পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালকের নিকট চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কন্টেইনার ডিটেনশন চার্জ আরোপ না করা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি অত্র অ্যাসোসিয়েশনের সকল সদস্য এমএলও এজেন্টদের নিকট তাদের বৈদেশিক প্রিন্সিপালদের অবগতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, কন্টেইনার ডিটেনশন চার্জ আরোপ এবং মওকুফ করার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে বৈদেশিক প্রিন্সিপালদের এখতিয়ারাধীন।
তাছাড়া, কন্টেইনার ডেলিভারি গ্রহণের জন্য প্রতিটি বি/এল এ ১৪ দিন থেকে ২১ দিন পর্যন্ত ফ্রি পিরিয়ড নির্ধারিত থাকে। ওই সময়ের মধ্যে ডিটেনশান চার্জ আরোপ করা হয় না। ফলে আমদানিকারকগণ কর্তৃক দীর্ঘ ফ্রি পিরিয়ডের মধ্যে মালামাল ডেলিভারি গ্রহণ করা হলে এমএলও এজেন্ট কর্তৃক কন্টেইনার ডিটেনশন চার্জ আরোপ করার সুযোগ থাকে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সুদীর্ঘকাল যাবত বিশ্বব্যাপী শিপিং বাণিজ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিপিং বাণিজ্য সাঙ্ঘাতিকভাবে হুমকির সম্মুখীন। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোভিড- ১৯) মহামারির আকার ধারণ করায় তা থেকে প্রাণহানির প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইতোমধ্যে আইএমও ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আদেশ-নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
ফলে উক্ত বিধিবিধান ও নির্দেশনাবলী প্রতিপালন পূর্বক বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি জাহাজ বার্থিংয়ের জন্য ১৫-১৬ দিন বহিঃনোঙরে অবস্থান করতে হয় এবং তাতে শিপিং এজেন্টগণ দৈনিক কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় উক্ত সংকটসমূহ মোকাবিলা পূর্বক শিপিং এজেন্টদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা তথা দেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রির অস্তিত্ব রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে সংকটের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েকটি ট্যারিফ আইটেম জরুরি ভিত্তিতে মওকুফ অথবা ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হ্রাস করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের উল্লেখিত আবেদন বিবেচনার পূর্বেই আপনার প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে যা আমাদের মর্মাহত করেছে। মুম্বাই ও ভারতীয় বন্দরের অনুসরণে আলোচ্য সার্কুলারটি জারি করা হলেও উক্ত বন্দরসমূহের অবস্থার সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থা তুলনা করা যায় না। কারণ মুম্বাই বন্দরে কোনো জাহাজের জট নাই এবং প্রতিটি জাহাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমদানিকৃত মালামাল খালাস করে রফতানি পণ্যসহ বন্দর ত্যাগ করে। পক্ষান্তরে জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নির্ধারিত সময়ের পরও ১৫-১৬ দিন অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েকটি ট্যারিফ আইটেম জরুরি ভিত্তিতে মওকুফ অথবা ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হ্রাস করা না হলে বৈদেশিক প্রিন্সিপাল কর্তৃক কন্টেইনার ডিটেনশন চার্জ মওকুফ বিবেচনা করা হবে মর্মে প্রতীয়মান হয় না। এক্ষেত্রে স্থানীয় এমএলও এজেন্টদের কন্টেইনার ডিটেনশন চার্জ মওকুফ বা হ্রাস করার সুযোগ থাকবে না।’