বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখবে কানাডা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য আরও ১০ বছর এ সুবিধা অব্যাহত রাখবে দেশটি। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি ট্যারিফ (এলডিসিটি) স্কিম অনুমোদন করেছে দেশটির হাউস অব কমন্স। বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশের সংখ্যা এখন ৪৯টি। এ স্কিমের বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর। তার আগেই নতুন মেয়াদ অনুমোদন দেওয়া হলো।
এলডিসি কাতার থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। উত্তরণের পর কানাডার বাজারে অন্য এলডিসিগুলোর মতো বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে কিনা তা সুস্পষ্ট নয়। তবে ওয়েবসাইটে কানাডার এ-সংক্রান্ত বিল ‘সি-৪৭’ বলা হয়, এখন পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত তাদের কোনো কৌশল নির্ধারিত নেই। শুল্কমুক্ত সুবিধায় থাকা এলডিসিভুক্ত দেশ থেকে আমদানি সংক্রান্ত সরবরাহ চেইন যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য উত্তরণের পর আরও তিন বছর এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। যদিও ২০২৯ সালের পর বাংলাদেশ এ সুবিধা পাবে কিনা তা স্পষ্ট করা হয়নি।
প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান মনে করেন, বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে কানাডায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে কোনো বাধা নেই। তার যুক্তি, এলডিসিভুক্ত হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার পর গোটা মেয়াদে এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও যাতে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এ সুবিধা পায়, সে ব্যাপারে তৎপর ছিলেন তারা। কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমানও সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে সহায়তা করেছেন তারা।
সম্প্রতি হাইকমিশনার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে এলডিসিটির সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত করেন তিনি। চিঠিতে তিনি বলেন, এলডিসি হিসেবে সংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ নতুন মেয়াদে অন্তর্ভুক্ত। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও পুরো মেয়াদে অর্থাৎ ২০৩৪ পর্যন্ত এ সুবিধা যাতে অব্যাহত থাকে, সে ব্যাপারে কানাডার নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
কানাডা বাংলাদেশের পণ্যের প্রচলিত শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে কানাডায় পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। রপ্তানি তালিকায় থাকা বেশির ভাগ পণ্যই যায় দেশটিতে। তবে অন্যান্য দেশের মতো কানাডায়ও তৈরি পোশাকই বেশি রপ্তানি হয়ে থাকে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশের মতো। মোট ১৫৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে কানাডায়। এর পরিমাণ আরও অনেক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কারণ কানাডার মোট পোশাক আমদানির ১৪ শতাংশের কম বাংলাদেশের অংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানিতে কানাডার হিস্যা ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। কানাডায় ওভেন ক্যাটাগরির পোশাকের চাহিদা নিট ক্যাটাগরি পোশাকের চেয়ে বেশি। গত জুলাই মাসে দেশটিতে ওভেনের রপ্তানি বেড়েছে আগের অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে ২৩ শতাংশেরও বেশি। একই সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশের মতো। মাসটিতে প্রায় ৭ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়। নিটের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ডলারের কিছু কম।