আসন্ন বাজেটে (২০১৯-২০) নতুন করে ৮০ লাখ করদাতা বাড়ানোর ঘোষণা আসছে। বর্তমান কর দিচ্ছেন এমন সংখ্যা ২০ লাখ। নতুন ৮০ লাখ যোগ হলে করদাতার সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি। মূলত কর হার না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পাঁচটি বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। যা নতুন অর্থবছর থেকে কার্যকর করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। কর প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আগামী বাজেটে কাউকে কষ্ট দিয়ে বাড়তি কর চাপানো হবে না। তবে এর আওতা সম্প্রসারণ করা হবে। কর দেয়ার যোগ্য কিন্তু দিচ্ছে না, তাদের এ আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। করের পরিমাণ বাড়াতে এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
সূত্রমতে, কর সংক্রান্ত হাল নাগাদ একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি এনবিআর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ্য করা হয়, করদাতার সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রির্টান দাখিলের (করদাতা) সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হয়েছে। এটি বর্তমান ২০ লাখ অতিক্রম করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কর দেয়ার যোগ্য এমন ৯৫ শতাংশই এখনও দিচ্ছেন না। কর দিচ্ছেন মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ। বর্তমান টিআইএনধারীর সংখ্যা ৪০ লাখ হলেও কর দিচ্ছেন ২০ লাখ। এসব দিক বিবেচনা করে সরকার আগামীতে করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সূত্রমতে, করের আওতা বাড়াতে সরকার সারা দেশের হাট-বাজার নিয়ে ইতিমধ্যে একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, দেশের জেলা ও উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৯ লাখ হাট-বাজার রয়েছে। হাট-বাজারগুলোর ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই এখন করের আওতার বাইরে রয়েছেন। আগামী অর্থবছরে ওই হাট বাজারে করযোগ্য ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে এর আওতায় আনা হবে। এছাড়া দেশব্যাপী অনেকেই করযোগ্য হলেও তারা কর দিচ্ছেন না। তাদের শনাক্ত করা হবে। এরপর তাদের কর নেটের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর জন্য আসন্ন বাজেটে ১০ হাজার কর্মী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এনবিআরে নিয়োগ দেয়ার ঘোষণাও থাকবে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে চাকরি পাচ্ছেন না তাদের মূলত এ কাজে সম্পৃক্ত কর হবে। তাদের কাজ হবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন করদাতার সন্ধান করা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে আয়কর খাত থেকে মোট রাজস্বের ৫০ ভাগ আহরণ করা হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন। তবে আয়করের অংশীদারিত্ব বাড়াতে আগামী বাজেটে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এনবিআর। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালের মধ্যে কর খাতের আয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ৩ শতাংশের সমান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমান কর জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশের সমান ভ্যাট আদায় হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে আগামী ৫ বছরে ভ্যাট খাতের আয় জিডিপির ৪ দশমিক ৭০ শতাংশের সমান উন্নীত হবে। এর ফলে কর জিডিপির অনুপাতও বাড়বে।
এছাড়া জুলাইয়ের মধ্যে আয়কর আইনকে যুগোপযোগী করে বাংলায় প্রণয়ন করা হবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত অগ্রাধিকার খাতগুলোর জন্য কর প্রণোদনা অব্যাহত রাখা। এর বাইরে কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ হলে সেখানেও তা অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি উৎসে আয়কর কর্তন ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং ইলেকট্রনিক উৎসে কর ব্যবস্থা চালু করা হবে।
কর্ম-পরিকল্পনায় আরও বলা হয়, একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী কর তথ্য ইউনিট গঠন করা হবে। যা দেশের অন্য সিস্টেমের সঙ্গে আন্তঃসংযুক্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করবে। এছাড়া এ সিস্টেমের আলোকে কর ফাঁকি উদ্ঘাটন ও করদাতা শনাক্তকরণে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক মানের কর প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে ফাঁকি রোধ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও তার ওপর প্রযোজ্য কর পুনরুদ্ধার করা হবে। পাশাপাশি কর তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম জোরালো করতে থার্ড পার্টি ইনফরমেশন সিস্টেম প্রতিষ্ঠা, আয়কর কর্মকর্তাদের পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ বন্ড মার্কেট উন্নয়নের স্বার্থে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, এনবিআরের কর্ম-পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে দেশের ব্যবসা পরিচালনা সহজীকরণ, আয়করসংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধানগুলো আরও স্পষ্ট করা, পরিবেশসংক্রান্ত আইন ও বিধি স্পষ্টীকরণ, টেকসই উন্নয়ন এবং ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এসব সংস্কারের মাধ্যমে কর আহরণের প্রবৃদ্ধি এবং নতুন করদাতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।