শুরু হলো আরেকটি নতুন অর্থবছর, এল নতুন কর বছর। শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে আপনি এখনই বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে পারবেন। আপনি আয়ের হিসাব-নিকাশ দেবেন ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে করযোগ্য আয় থাকলে কর দিতে হবে। এখন আপনি হিসাব করে দেখুন, কত আয় করলেন। প্রতিবছরই আয়কর অধ্যাদেশে কমবেশি পরিবর্তন হয়। সেখানে ব্যক্তি আয়ের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসে। রিটার্নের প্রস্তুতি নিতে জেনে নিতে হবে এবার আয়করে কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দেওয়া যায়। এবারের রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে ব্যক্তি করদাতাদের জন্য যেমন ভালো খবর আছে, তেমনি খারাপ খবরও আছে। খারাপ খবরটি হলো, বিভিন্ন মহলের দাবি সত্ত্বেও এবারও করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই আড়াই লাখ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। চার বছর ধরেই করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি। ভালো খবর হলো, সঞ্চয়পত্রসহ নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় বাড়বে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন; অন্যান্য সিটি করপোরেশন এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ন্যূনতম কর যথাক্রমে ৫ হাজার টাকা, ৪ হাজার টাকা ও ৩ হাজার টাকা দিতে হবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কর নীতি) কানন কুমার রায় বলেন, এবার আরও বেশি করদাতাবান্ধব পরিবর্তন আইন আনা হয়েছে। সৎ করদাতারা বেশি সুবিধা পাবেন। অসৎ করদাতারা পার পাবেন না। আশা করি, এবার আগের চেয়ে আরও বেশি করদাতা রিটার্ন জমা দেবেন।
যত পরিবর্তন
বার্ষিক আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ এবং ১৫ লাখ টাকার বেশি আয় হলে ১০ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। এতে বিনিয়োগকারী করদাতার হিসাব রাখা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে।
অন্যদিকে কম্পিউটার-ল্যাপটপ কিনলে প্রতিবছর কর রেয়াত পাওয়া যেত। এখন আর ল্যাপটপ-কম্পিউটার কিনে কর রেয়াত মিলবে না। এনবিআর বলছে, এত দিন এই সুবিধার অপব্যবহার হয়েছে। রসিদ দেখিয়ে অনেকে কর রেয়াত নিয়ে যেত। এ ছাড়া আপনি যদি ন্যায্যমূল্যের চেয়ে কম মূল্যে শেয়ার কেনেন, তাহলে কম প্রদর্শিত টাকা আয় হিসেবে বিবেচনা করবে এনবিআর।
এবার ধনীদের সারচার্জে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এত দিন সোয়া দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলেই সারচার্জ দিতে হতো। এবার এই সীমা বাড়িয়ে তিন কোটি টাকা করা হয়েছে। কোনো করদাতার যদি নিজের নামে দুটি গাড়ি থাকে কিংবা সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুট আয়তনের এক বা একাধিক ফ্ল্যাট বা গৃহসম্পত্তি থাকে, তাহলে সারচার্জ আরোপ হবে।
চলতি বছর থেকে এ দেশে স্থায়ীভাবে ব্যবসা করলে অনাবাসীদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করলে বিদেশিদের রিটার্ন দিতেই হবে।
টিআইএনে কড়াকড়ি
এ বছর টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে দুটি ক্ষেত্রে। সব ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) লাগবে। যাঁদের বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, তাঁদের বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার সময় টিআইএনের অনুলিপি জমা দিতে হবে।
সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও জেলা সদরে এক লাখ টাকার বেশি জমিসহ স্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচা বা হস্তান্তরের সময় টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতার টিআইএনের উল্লেখ থাকতে হবে। টিআইএন ছাড়া জমি কেনাবেচা করা যাবে না।
যাঁদের রিটার্ন বাধ্যতামূলক
১০ পেশাজীবীর আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই তালিকায় আছেন চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, ব্যয় ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষ হিসাববিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি, জরিপকারী, আয়কর পেশাজীবী এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা স্থানীর সরকারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার। গত বছর থেকে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে সব বেসরকারি চাকরিজীবীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি উবার, পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিংয়ে গাড়ি দিলেও বছর শেষে রিটার্ন দিতে হবে।
যদি আপনার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার বেশি হয়; তবু আপনাকে সম্পদ বিবরণী দিতে হবে। আপনার স্বামী বা স্ত্রী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান ও নির্ভরশীল ব্যক্তি করদাতা না হলে তাঁদের সম্পদ ও দায় আপনার সম্পদ বিবরণীতে দেখাতে হবে।
চেক লিস্ট
শুধু আয়কর ও সম্পদ বিবরণীর ফরম পূরণ করে দিলেই হবে না, আয় কিংবা বিনিয়োগ করে কর রেয়াতের বিপরীতে বেশ কিছু কাগজপত্র আয়কর বিবরণীর দলিলের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এ জন্য যেসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে; সেগুলোর অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।
কোনো করদাতা যদি কর রেয়াত নিতে চান, তবে বেশ কিছু কাগজপত্র লাগবে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ।