কর নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি তা দূর করতে মেলা। করদাতার মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। কর দিয়ে কেউ গরিব হয় না। কর দিলে ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) জিইসি কনভেনশন সেন্টারে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসব কথা বলেন। মেয়র বলেন, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এ দেশ আমাদের। আমাদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। প্রতিটি মানুষের মধ্যে স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা অনেক। যা বাস্তবায়ন নির্ভর করে পরিকল্পনা, সদিচ্ছা, আন্তরিকতার ওপর। একসময় বাংলাদেশকে দরিদ্র, হতদরিদ্র, তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলা হতো। এখন বলছে উন্নয়নের রোল মডেল আমরা। অর্থনৈতিক বিস্ময়ের দেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এটি সম্ভব হয়েছে। স্বাধীন দেশে একাধিক দল থাকবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে। বিরোধিতার কারণে বিরোধিতার মানসিকতা দূর করতে হবে। এটি উন্নয়নে বড় বাধা বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশনে প্রশ্ন করা হতো। কারণ আমরা গরিব দেশ ছিলাম। এখন বিদেশি বিমানবন্দরে অযথা হয়রানি করা হয় না।
কর রাষ্ট্রের হক উল্লেখ করে মেয়র বলেন, সবাই কর দিলে দেশ উন্নত হবে।
বিশেষ অতিথি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস পলিসি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া বলেন, মেলার কারণে সব স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। করদাতারা ন্যায্য কর পরিশোধে মেলায় আসবেন। দেশে চলমান মেগা প্রকল্পে অর্থায়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ভূমিকা অপরিসীম।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আয়কর মেলা জনগণকে ১০ বছরে করবান্ধব করেছে। মানুষের আয়কর ভীতি দূর হয়েছে। সরকার প্রশাসনযন্ত্রকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে। বিনামূল্যে সঠিক রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া শিখতে পারবেন মেলায়। আয়কর দেবেন সম্পদের সুরক্ষার জন্য।
চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, শরীরে যদি রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয় মৃত্যু অনিবার্য, তেমনি সরকারি সেবা করের ওপর নির্ভরশীল। ডিজিটাল দেশে কর ছাড়া সম্পদ লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই।
কর কমিশনার জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য সৈয়দ মো. আবু দাউদ, কর কমিশনার ইকবাল হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান, মফিজ উল্লাহ, কর আপিল অঞ্চলের কমিশনার হেলাল উদ্দিন সিকদার প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে কর কমিশনার ব্যারিস্টার মুনতাসির বিল্লাহ ফারুকী বলেন, আয়কর একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা। আয়কর সেবা প্রান্তিক করদাতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন। নাগরিকদের করভীতি দূর করা এ মেলার মূল লক্ষ্য। আয়কর মেলা করদাতাদের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে।
উদ্বোধনী দিনেই জমজমাট হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের আয়কর মেলা। সকাল থেকে নানা বয়সী করদাতারা কর সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নিয়ে মেলায় ভিড় করেন।
আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আয়কর মেলা চলবে। মেলায় নতুন করদাতারা ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, রিটার্ন দাখিল, ই-পেমেন্টসহ সব ধরনের সেবা একই ছাদের নিচে পাবেন। মেলায় রয়েছে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জীবন বিমা, সঞ্চয় অধিদফতরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৬টি বুথ। মেলায় দুই পালায় ৬৫০ জন কর কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।