জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগের টেক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বরের (টিআইএন) পরিবর্তে এখন চালু করেছে ই-টিআইএন। আগের টিআইএনধারীদেরও এখন ই-টিআইএন নিতে হচ্ছে।
যেভাবে অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন:
প্রথমে যেতে হবে www.incometax.gov.bd ওয়েবসাইটে। এটি এনবিআরের আয়কর বিভাগের একটি ওয়েবসাইট। এর হোমপেজের রেজিস্ট্রার বাটনে ক্লিক করলে রেজিস্ট্রেশন ফরম পাওয়া যাবে। ফরমে মোবাইল ফোন নাম্বার দিতে হবে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে একটি কোড পৌঁছে যাবে মোবাইল ফোনে। পর্দায় প্রদর্শিত ডায়লগ বক্সে মোবাইল ফোনে দেয়া কোডটি দিয়ে একটিভ বাটনে ক্লিক করলেই পর্দায় দেখতে পাবেন Welcome to...”।
এখন টিন অ্যাপ্লিকেশন মেন্যুতে ক্লিক করলে এবার রেজিস্ট্রেশন বা রি-রেজিস্ট্রেশন ফরমে প্রদর্শিত শূন্যস্থান পূরণ করে পরবর্তী পেজে যেতে হবে। নতুন করদাতারা রেজিস্ট্রেশন বাটনে এবং পুরনো করদাতারা যাদের টিআইএন নম্বর আছে তারা রি-রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করবেন।
এতে ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করে আবার পরবর্তী পেজে যেতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিকের (যাদের জাতীয় পরিচিতি নম্বর নেই) নতুন-ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এ পর্যায়ে এসে ডিজিটাল ফরমেটে সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি আপলোড করতে হবে।
প্রিভিউতে ফরমে প্রদর্শিত আপনার দেয়া তথ্যগুলো সঠিক আছে কিনা, তা শেষবারের মতো যাচাই করতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ফাইনাল প্রিভিউর একেবারে নিচে চেক বক্সে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এরপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই রেজিস্ট্রেশন বা রি-রেজিস্ট্রেশনকারী নতুন ১২ ডিজিটের টিআইএন পাবেন।
৩৩ কাজে টিআইএন বাধ্যতামূলক
মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা, মোবাইল ব্যাংকিং, পরিবেশক এজেন্সি, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ ও সিকিউরিটি সার্ভিসের। পাশাপাশি আমদানি, রফতানি, বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন লাগবে। পরামর্শ সেবা, খাবার সরবরাহ, ইভেন্ট ম্যানেজ সেবা, জনবল সরবরাহ এবং নিরাপত্তা সেবা (সিকিউরিটি সার্ভিস) দানকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই টিআইএন নিতে হবে। কোনো কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নেয়ার ক্ষেত্রেও টিআইএন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেয়া কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিতে। আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলা যাবে না টিআইএন ছাড়া। এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে, আমদানি-রফতানির বিল অব এন্ট্রির ক্ষেত্রেও এটি লাগবে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ভেতরে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে না টিআইএন নম্বর ছাড়া। কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্য হতে গেলেও টিআইএন লাগবে। সাধারণ বীমার জরিপ কর্তারও টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদর পৌরসভায় জমি-বিল্ডিং বিক্রি, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, হস্তান্তর, দলিলসহ এক লাখ টাকার বেশি মূল্যের কোনো চুক্তিনামা করতে গেলেই টিআইএন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। বাস, প্রাইম মোভার, লরির মালিকানা পরিবর্তন কিংবা ফিটনেস নবায়ন করতে। এছাড়া চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট, আর্কিটেকচার, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হতে গেলে, কোনো কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর পরিচালক, মুসলিম বিবাহ ও ডিভোর্স আইনে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও যে কোনো ট্রেড বডির সদস্য হতেও টিআইএন লাগবে। অর্থ আইন ২০১৭-এ বলা হয়েছে, রাজউক, সডিএ, কেডিএ ও আরডিএ এলাকার মধ্যে কোনো ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে অনুমোদন নিতে হলে টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। এছাড়া ড্রাগ লাইসেন্স, গ্যাসের বাণিজ্যিক সংযোগ, সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় বিদ্যুতের বাণিজ্যিক সংযোগ, মোটর গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতেও টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। লঞ্চ, স্টিমার, ফিশিং ট্রলার, কার্গো কোস্টারসহ বিভিন্ন জলযানের জরিপ সনদ নেয়া, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নিবন্ধন ও নবায়ন, জেলা পরিবেশ কার্যালয় থেকে ইটভাটার অনুমোদন নিতে থাকতে হবে টিআইএন। এছাড়া উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে টিআইএন বাধ্যতামূলক।