আগামী অর্থবছরের বাজেটে কোন শর্ত ছাড়াই ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। করোনায় বিধস্ত শেয়ারবাজার ও আবাসন খাত চাঙ্গা করতে এই সুযোগ মাত্র এক অর্থবছরের জন্যই বহাল থাকবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১১ জুন এই বাজেট ঘোষণা করবেন। শুধু ২০২০-২১ অর্থবছরে এই দুই খাতে বিনিয়োগ করলে ৩০ দিনের মধ্যে কর দিতে হবে।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রভাব কাটাতে শেয়ারবাজার ছাড়াও জমি কেনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই টাকা ব্যয় করা যাবে। জমি ও ফ্ল্যাটের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত এই কর ধার্য করা হবে। আর শেয়ারবাজারে যারা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেবেন, তারা কোন ধরনের শর্ত ছাড়া শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং বন্ড কিনে ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা বৈধ করতে পারবেন। বিনিয়োগ করা কালো টাকা অর্থের উৎস জানতে চাওয়াসহ অন্যান্য শর্ত এবার শিথিল করা হবে।
শেয়ারবাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুই দশক আগেও ছিল। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রেখে বাজেট প্রস্তাব করেন। ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে ধসের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বাজার চাঙ্গা করতে এই সুযোগ দেয়।
অন্যদিকে আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আগেও ছিল, এবারও তা বহাল থাকছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে থাকছে, ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা কর দিয়ে জমি কেনা যাবে। কর দেয়ার এই সর্বনিম্ন হার ৫০০ টাকা প্রান্তিক গ্রামগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। সর্বোচ্চ করহার প্রযোজ্য হবে গুলশান ও বনানীর মতো জায়গাগুলোতে। তবে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় করের হার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা। একইভাবে এলাকাভেদে ভবন ও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা প্রতিবর্গফুটের ওপর কর প্রদান করতে হবে।
আগামী বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাবকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, করোনার করালগ্রাস থেকে শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতের শিল্প উদ্ধার করতে কালো টাকা সাদা করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ডিএসইর পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছেন, যেটি শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারী উপকৃত হবেন। বিশেষ করে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারবাজারে শেয়ারের ক্রেতা বাড়বে। এটি শেয়ারবাজারকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া বর্তমানের সঙ্কটের সবচেয়ে বড় সমাধান। এতে করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আগামী বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর চেয়ে করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ওপর গুরত্ব দেয়া হবে। আগের বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর ওপর গুরত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবারে বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এটি হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দর বাড়বে; প্রায় ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর মুখে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ সালে ৪৫০ কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল। যদিও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অনেক আগে থেকেই ছিল। প্রায় সব সরকারই এই সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু খুব বেশি কার্যকর হয়নি। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সর্বোচ্চ ৯ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছিল। অপরদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী বিগত ৪৭ বছরে মোট ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছিল। আর এই কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে সরকার ১৪৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে।
বাংলাদেশে কালোর টাকার পরিমাণের কোন হিসাব নেই, তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বিগত ২০১০ সালে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিল সেখানে কালো টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছিল মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশ।