অনলাইনে ৯৬ ঘণ্টা ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ থাকবেরমজানে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে কর অব্যাহতিখোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের শুল্ক বাকি ১৮ হাজার কোটি টাকা, ৩৭ চিঠি দিয়েও ব্যর্থ এনবিআরভ্যাটের একক রেট করতে পারলে ফাঁকি কমে যাবেজুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনায় জাতীয় ভ্যাট দিবস উদযাপন
No icon

এবারের বাজেট করের জালে বিছানো

মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ও কর্পোরেট করে ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর, ভ্যাট আইন সংশোধন করে ব্যাপকভাবে করের জাল বিছিয়েছেন। এতে ছোট, মাঝারি ও বড় সব শ্রেণিপেশার মানুষই আটকা পড়বেন। যেমন বাজেটে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলেই রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানার বিধান আছে। অন্যদিকে লাভ-ক্ষতি নির্বিশেষে সব ধরনের ব্যবসায় দশমিক ৫০ শতাংশ হারে ন্যূনতম কর আরোপ করা হয়েছে। নিত্যপণ্য বেচাকেনায় ২ শতাংশ উৎসে কর বসানো হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন তিনটি খাত যুক্ত করে ৩৪টি খাতে টিআইএন সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

অন্যদিকে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা (৭৫ এফ) যুক্ত করে সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেভাবেই হোক আগামীতে কোনো টিআইএনধারী রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এক যুগ সফলভাবে দেশ পরিচালনায় বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগতির পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অনেক নাগরিক আয়কর দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছেন। আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় টিআইএনধারীর অর্ধেকেরও কম আয়কর রিটার্ন জমা দেন। ফলে অনেক টিআইএনধারীর ক্ষেত্রে করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন দাখিল না করে কর পরিশোধ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত সব টিআইএন গ্রহণকারীর জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

আয়কর অধ্যাদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে তিন ধরনের জরিমানার বিধান আছে। ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা, ৭৩ ধারা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ এবং ৭৩-এ ধারা অনুযায়ী বিলম্ব সুদ। ১২৪ ধারায় বলা হয়েছে- করদাতা যদি কোনো কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করেন, আবার এজন্য অনুমোদনও না নেন, সেজন্য তার পূর্ববর্তী বছর প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় অংক ওই পরিমাণ অর্থ জরিমানা হবে।

একইসঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে বাড়তি জরিমানাও গুনতে হবে। ৭৩-এ ধারায় বলা আছে, ৩০ নভেম্বরের পর কর কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে দেরিতে রিটার্ন জমা দিলেও ২ শতাংশ বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

বর্তমানে দেশে টিআইএনধারী রয়েছে ৪৬ লাখের বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রায় ২২ লাখ করদাতা। ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ব্যবসায় ন্যূনতম কর বসানো হয়েছে। তিন কোটি টাকার বেশি বার্ষিক টার্নওভারযুক্ত সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ন্যূনতম করের আওতায় আনা হয়েছে। লোকসান হলেও টার্নওভারের সীমা অতিক্রম করলে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। অর্থাৎ তিন কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে লাভ-লোকসান যাই হোক না কেন, ন্যূনতম দেড় লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। সব ধরনের ব্যবসায় এ করের আওতায় পড়বে।

এছাড়া চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, মটর ডাল, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, আটা-ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, গোলমরিচ, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, তেজপাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি, পাট, তুলা, সুতা, সব ধরনের ফল ক্রয় বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্থানীয় এলসির বিপরীতে উৎসে কর ২ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে এসব কেনায় উৎসে কর ছিল না। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী গোলাম মওলা বলেন, টার্নওভারের ওপর কর বসাক আর যাই করুক, ব্যবসায়ীরা তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না। অফিস খরচ, গাড়ি ভাড়া যেভাবে পণ্যের দামের ওপর বসানো হয়, তেমনি ন্যূনতম ট্যাক্সও ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করা হবে। পাইকারি ব্যবসার ওপর ন্যূনতম কর আদায় করা হলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক ১০০ টাকা মোবাইল ফোনে রিচার্জ করলে ২৫ টাকা সরকার ট্যাক্স-ভ্যাট হিসেবে পাবে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। বর্তমানে দেশের মোবাইল ফোন গ্রাহক ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল ফোন গ্রাহকদের করের বোঝা আরও বাড়ল।

কাস্টমসের মিথ্যা ঘোষণার জরিমানা যৌক্তিক করা হয়েছে :কাস্টমস আইনের ১৫৬ ধারা সংশোধন করে পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার জরিমানা কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। আগে কাস্টমস কর্মকর্তা চাইলে আমদানি করা পণ্য মূল্যের সর্বোচ্চ ৩ গুণ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারতেন। এটিকে কমিয়ে পণ্যের ফাঁকি শুল্কের দ্বিগুণ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে।