শুধু করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেয়ার পর প্রথমবার অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। পুরনো করদাতারা আগে ম্যানুয়ালি বা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলেও এ ছাড় পাবেন না। মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের ওয়েবসাইটে আয়কর পরিপত্র জারি করেছে। তাতে এই ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রতিবছরই বাজেটে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের পরিবর্তন আনে এনবিআর। পরবর্তী সময়ে পরিপত্র জারির মাধ্যমে সেসব ধারা, উপধারা স্পষ্টীকরণ করা হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমায় করদাতাদের উৎসাহিত করতে ২ হাজার টাকা কর ছাড়ের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু এই ছাড় সব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে পাবেন না। সে বিষয়টি পরিপত্রে স্পষ্ট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অনলাইনে রিটার্ন জমায় ২ হাজার টাকা কর ছাড় বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র বিষয়।
করদাতারা নিজের প্রয়োজনেই অনলাইনে রিটার্ন জমা দেবেন। কারণ অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে কিছু দিতে হয়। এছাড়া হয়রানি তো আছেই।
এর হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই অনলাইনে রিটার্ন জমার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে এনবিআরের অনলাইনে রিটার্ন জমার পদ্ধতি অনেক জটিল। এটি আরও সরলীকরণ করা দরকার।
এছাড়া কোম্পানি করদাতার আয়কর বিবরণীতে আমদানি-রফতানি বা বিনিয়োগের তথ্যে গরমিল পেলে ৫০ শতাংশ কর আদায় করা হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, একটি প্রতিষ্ঠান বিবরণীতে আমদানি পরিমাণ দেখিয়েছে ১০ কোটি টাকা।
কিন্তু কর নির্ধারণের সময় পাওয়া গেল ১৫ কোটি টাকা। এই ৫ কোটি টাকার ওপর ৫০ শতাংশ হারে আড়াই কোটি করারোপ করা হবে। একইভাবে রফতানি তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে কর আরোপ করা হবে।
আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধনি যন্ত্রপাতির সঙ্গে বিবরণীতে উল্লিখিত তথ্যের গরমিল পাওয়া গেলেও করারোপ করা হবে।
এছাড়া বাজেটে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদিত বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অন্য সিকিউরিটিজে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রেও শর্তারোপ করা হয়েছে। বিনিয়োগের ৩০ দিনের মধ্যে উপ-কর কমিশনারের কাছে নির্ধারিত ফরমে ঘোষণাপত্র দাখিল করে কর পরিশোধ করতে হবে। বিও অ্যাকাউন্টে জমাকৃত টাকা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ না করলে এ সুযোগ পাওয়া যাবে না।
অন্যদিকে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি বা বিল্ডিং বা ফ্ল্যাট প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও শর্তারোপ করা হয়েছে। করদাতার বিরুদ্ধে আগে কোনো ধরনের কর ফাঁকির অভিযোগে কার্যক্রম চলমান বা অন্য আইনে আর্থিক বিষয়ে কার্যক্রম থাকলে এ সুবিধা পাবে না।
এ সুবিধায় প্লট বা ফ্ল্যাট প্রদর্শনের জন্য অবশ্যই আগামী বছরের ৩০ জুনের আগে সংশোধিত রিটার্ন জমা দিতে হবে। তবে রিটার্নে জমি, ফ্ল্যাট বা বিল্ডিংয়ের দলিল মূল্যকে অপ্রদর্শিত নগদ দেখানো যাবে না। প্রতি বর্গমিটারের জন্য নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করতে হবে।
রিটার্ন জমায় অব্যাহতি : চলতি বাজেটে জমি বিক্রির প্রয়োজনে টিআইএন নেয়া ব্যক্তিদের রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া করযোগ্য আয় নেই- এমন ব্যক্তিরা ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য টিআইএন নিলেও রিটার্ন জমা দিতে হবে না।
আগে এমপিও সুবিধাভোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ফান্ড, অনিবাসী ব্যক্তিদের রিটার্ন জমা দিতে হতো না।
এছাড়া সব টিআইএনধারী, লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক বা সম্পদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের রিটার্ন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কোনো টিআইএনধারী রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে।