অনলাইনে ৯৬ ঘণ্টা ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ থাকবেরমজানে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে কর অব্যাহতিখোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের শুল্ক বাকি ১৮ হাজার কোটি টাকা, ৩৭ চিঠি দিয়েও ব্যর্থ এনবিআরভ্যাটের একক রেট করতে পারলে ফাঁকি কমে যাবেজুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনায় জাতীয় ভ্যাট দিবস উদযাপন
No icon

করের আওতায় আরও ১০ লাখ

করোনা মহামারিকালে জনগণের জীপনযাপন যাতে সহজ হয়, সে জন্য একটি কর-বান্ধব বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। এ লক্ষ্যে নতুন কোনো করহার না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে। নতুন বাজেটে অতিরিক্ত ১০ লাখ নতুন করদাতা শনাক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে অথচ আওতার বাইরে এখনো, এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হবে। বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রয়েছে ৬১ লাখের বেশি। বাড়তি ১০ লাখ যুক্ত হলে এ সংখ্যা ৭১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী এক বছরের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি লোককে করের আওতায় আনা। সে লক্ষ্য অর্জনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ দেশের অনেকেরই কর দেয়ার সামর্থ্য আছে, অথচ কর পরিশোধ করছে না।

আগামী বাজেটে সামর্থ্যবান সবাইকে কর নেটে আনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এখন নিবন্ধিত বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৬১ লাখ হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২৫ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে তিন লাখ রিটার্ন আছে যাদের আয় শূন্য। তাদের কাছ থেকে কোনো কর পায় না সরকার। ফলে নিয়মিত রিটার্ন দিচ্ছে মাত্র ২২ লাখ। সামর্থ্যবান সবাইকে যাতে করের আওতায় আনা যায়, সে জন্য এবারের বাজেটে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তারা। আয় অনুযায়ী বাংলাদেশে কতজনের কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এনবিআর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো জরিপ করেনি। তবে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড ২০১৬ সালে এ বিষয়ে একবার জরিপ করেছিল। তাতে উল্লেখ করা হয়, কমপক্ষে ৬৯ লাখ লোকের কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেটে উল্লেখ করেন, এ দেশে কমপক্ষে চার কোটি লোকের কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে দেশের মোট জনগণের ১ শতাংশের কিছু বেশি নিয়মিত কর দিচ্ছে। এ প্রবণতা বাংলাদেশের কর-সংস্কৃতির বড় দুর্বলতা বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদসহ কর বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ আয়কর দেন।

গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার, তার সঙ্গে আয়কর আহরণের সামঞ্জস্য নেই। রাজস্ব ব্যবস্থার বড় ধরনের দুর্বলতার কারণেই এটা হয়েছে। রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরে ব্যাপক সংস্কারের পরামর্শ দেন তিনি। করমুক্ত আয়সীমা পরিবর্তনশীল। অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছর বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়। চাকরি থেকে আয় করেন (বেতনভোগী চাকরিজীবী) এমন করদাতাদের কাছ থেকে মোট আদায়কৃত করের মাত্র ১০ শতাংশ সংগৃহীত হয়।

বাকি কর আহরণ হয় কোম্পানি, ব্যবসায়ী, কৃষিজীবী, ভাড়া প্রদানকারী ও পেশাজীবীদের কাছ থেকে। দেশে প্রান্তিক তথা সাধারণ করদাতার সংখ্যাই তুলনামূলক বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বাড়লেও সে তুলনায় বিত্তবান করদাতার সংখ্যা খুবই কম। তবে বড় করদাতাদের তালিকা কখনই প্রকাশ করে না এনবিআর। আয়কর আইনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয় থাকুক আর না থাকুক, বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেই হবে। না দিলে প্রচলিত আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে।