রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম জানান তিনি বাড়ি-গাড়ির মালিকের তথ্য: ৩ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে এনবিআরের
ডিপিডিসি, ডেসকো ও বিআরটিএ এর সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। ঢাকার বাড়ি ও গাড়ির মালিকদের কর জালের আওতায় আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
দুই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো এবং বিআরটিএ এর সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম।
এর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, বাড়ির মালিককে খুঁজতে গেলে তারা যদি বুঝতে পারে যে এনবিআর থেকে এসেছে, তখন অস্বীকার করে অথবা নিজেকে বাড়ির কেয়ারটেকার বলে পরিচয় দেয়। তখন আমাদের কোনও প্রমাণ না থাকায় আমরা কিছু করতে পারি না।
তাই আমরা বাড়ির মালিক এবং বিদ্যুতের মিটারের মালিক চিহ্নিত করার জন্য ডিপিডিসি ও ডেসকোর সঙ্গে এপিআই চুক্তি করেছি। চেয়ারম্যান জানান, নির্ধারিত কর আদায়ের সুবিধার্থে গাড়ির মালিক চিহ্নিত করতে তথ্য বিনিময়ের জন্য বিআরটিএ এর সঙ্গেও এপিআই চুক্তি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ আকর্ষণেই বিদেশে তাদের সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদ দেশে আনার উদ্দেশ্যেই ৭ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিয়ে বিনাপ্রশ্নে আয়কর বিবরণীতে অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
রহমাতুল মুনিম বলেন, অনেক দেশই এভাবে নিজেদের প্রবাসীদের সঞ্চিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে লাভবান হয়েছে। আমরাও সেই সুযোগটা নেওয়ার জন্য দিয়েছি। কারণ বিদেশে ব্যাংকের সুদের হার কম। তাই দেশে বিনিয়োগের সুযোগটা প্রবাসীরা নিবে বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, হয়ত এখানে সামান্য অবৈধ অর্থও আসতে পারে। কিন্তু এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে প্রবাসীদের সঞ্চিত অর্থ দেশে বিনিয়োগে নিয়ে আসার জন্য। অবৈধ বা পাচারকারীদের জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এসময় প্রশ্ন না করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশে যার সঞ্চিত অনেক অর্থ রয়েছে তা দেশে আনার ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা হলে ওই প্রবাসী অনুৎসাহিত হতে পারেন। সেজন্যই প্রশ্ন না তোলার বিষয়টি রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ করে কর জাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদানে উৎসাহিত করতে নতুন করদাতারা এখন নির্দিষ্ট সময়ের পরিবর্তে অর্থবছরের যে কোনও দিন রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এজন্য কোনও জরিমানা নেওয়া হবে না।
সরকারি কিছু সেবার ক্ষেত্রে ই-টিআইএন সনদের বদলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করার কারণে রিটার্ন দেওয়ার হার বাড়বে বলে আশা তার। এসময় তিনি বিভিন্ন কর ছাড় ও সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির বিকাশ, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো ও রপ্তানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে জানান। আগের অর্থবছরের চেয়ে আদায় ৪১ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৮ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের সরকার ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়কে খুব খারাপ বলা যাবে না বলে মনে করেন মুনিম।