করদাতার অপ্রদর্শিত বৈদেশিক সম্পদ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে চলতি বাজেটে। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো করদাতা তার অপ্রদর্শিত বৈদেশিক সম্পদ মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়ে প্রদর্শন করতে পারবেন।সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়কর পরিপত্র জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে- আয়কর অধ্যাদেশ বা বাংলাদেশে বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা ২০২২-২৩ করবর্ষের রিটার্ন দাখিলের আগে দেশের বাইরে অবস্থিত অপ্রদর্শিত সম্পদের বিপরীতে কর পরিশোধ করলে সম্পদের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।পরিপত্রে বলা হয়, করদাতা যেকোনো পরিমাণ নগদ অর্থ অথবা ব্যাংকে জমা অর্থ বা যেকোনো ব্যাংক নোট, ব্যাংক হিসাব, কনভারটেবল সিকিউরিটিজ ও আর্থিক দলিলসমূহ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে পারবেন। করদাতা যে ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁর বিদেশে থাকা অর্থ দেশে আনবেন, সে ব্যাংক মোট অর্থের ওপর ৭ শতাংশ হারে কর কেটে এ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করবে। বাকি টাকা করদাতার হিসাবে জমা করবে। পাশাপাশি করদাতাকে ব্যাংকের আয়কর কর্তন সম্পর্কিত একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।পরিপত্রে আরও বলে হয়, গত ৩০ জুনের আগে যেসব ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশ অথবা অন্য কোনো আইনে করফাঁকি বা ফৌজদারি অপরাধসংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম করলে করদাতারা এসব সুযোগ নিতে পারবেন না। আয়কর পরিপত্রে এ বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
উদাহরণে বলা হয়-- ধরা যাক, আবু মুসা নামের কোনো ব্যক্তি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের আগে বিদেশ থেকে ৫ কোটি ডলার দেশে আনলেন। তিনি ব্যাংকে জানালেন যে, আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ (এফ) ধারা, অর্থাৎ যে ধারায় অপ্রদর্শিত বৈদেশিক সম্পদ প্রদর্শনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে কর পরিশোধ করে এ অর্থ আয়কর রিটার্নে দেখাতে চান।করদাতার এমন ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক মোট অর্থের ওপর ৭ শতাংশ হারে কর কেটে এ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করবে। করদাতাকে এ অর্থ সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে তাকে কর পরিশোধসংক্রান্ত একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।এরপর করদাতা তার দেশে ফিরিয়ে আনা অর্থ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করবেন ও কর পরিশোধের প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করবেন। এভাবে বৈদেশিক সম্পদ প্রদর্শন করলে কোনো জরিমানা আরোপ করা যাবে না। করদাতাকে মনে রাখতে হবে, যে ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পদ বা অর্থ দেশে আনা হবে, সে ব্যাংকের মাধ্যমেই কর পরিশোধ করতে হবে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়- দেশে বসবাসরত করদাতার বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের যেমন সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তেমনি যেসব করদাতা তাদের বিদেশে থাকা অর্থ প্রদর্শন করবেন না, তাদের জন্য জরিমানার বিধানও রেখেছে সরকার। তবে জরিমানার আগে করদাতাকে শুনানির পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হবে।সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার করদাতার কাছ থেকে বিদেশে সম্পদ অর্জনের প্রকৃতি ও উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা শুনবেন। শুধু সম্পদের উৎস নয় বরং কীভাবে সম্পদ অর্জিত হয়েছে, যে উৎস থেকে সম্পদ অর্জিত হয়েছে, তার উৎস, প্রকৃতি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা করা হবে।করদাতার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে বিদেশে থাকা সম্পদের ন্যায্যমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে আদায় করতে পারবেন উপ-কর কমিশনার। অর্থাৎ, জরিমানার হার হবে ১০০ শতাংশ।
করদাতার সম্পদ বা করদাতার পক্ষে অন্য কেউ তার সম্পদ ধারণ করলে, সে সম্পদ বাজেয়াপ্ত বা বিক্রি করে জরিমানা আদায় করা যাবে। এমনকি উপ-কর কমিশনার যদি বিশ্বাস করেন, কোনো করদাতার বিদেশে সম্পদ রয়েছে, তাহলে তিনি সম্পদের তথ্য নিশ্চিত করতে বিদেশে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবেন।উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে--ধরা যাক, ইন্দ্রনীল একজন নিয়মিত করদাতা। তার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার বা বোর্ডের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যার মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে বিশ্বাস করার পক্ষে যুক্তি রয়েছে যে, ইন্দ্রনীলের বিদেশে অপ্রদর্শিত সম্পদ রয়েছে। তার ওই সম্পদের ন্যায্যমূল্য ২০ কোটি টাকা। উপ-কর কমিশনারের তদন্তে এ তথ্যের সত্যতা মিললে করদাতাকে নিয়ে এ বিষয়ে শুনানিতে ডাকা হবে।করদাতা তার সম্পদ অর্জনের উৎস ও এর প্রকৃতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ (জি) ধারা অনুযায়ী, সম্পদের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করতে পারবে এনবিআর। একই সঙ্গে অন্যান্য আইন অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেগুলোও নেওয়া হবে। করদাতার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বা করদাতার পক্ষে অন্য কেউ সম্পদ ধারণ করলে তা বাজেয়াপ্ত বা বিক্রি করে জরিমানা আদায় করবে এনবিআর।