অনলাইনে ৯৬ ঘণ্টা ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ থাকবেরমজানে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে কর অব্যাহতিখোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের শুল্ক বাকি ১৮ হাজার কোটি টাকা, ৩৭ চিঠি দিয়েও ব্যর্থ এনবিআরভ্যাটের একক রেট করতে পারলে ফাঁকি কমে যাবেজুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনায় জাতীয় ভ্যাট দিবস উদযাপন
No icon

যে ভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন

নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে প্রায় তিন মাস। চলছে আয়কর রিটার্ন দাখিল। করদাতারা রিটার্ন দাখিল করছেন। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব করে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিচ্ছেন অনেকে। প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাধারণভাবে রিটার্ন দাখিল করা যায়। করদাতারা নিজস্ব আয়কর সার্কেল অফিস থেকে অথবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে রিটার্ন ফরম সংগ্রহ করে রিটার্ন জমা দিতে পারেন। যার যার সার্কেল অফিসে রিটার্ন জমা দিতে হয়। অনলাইনেও রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা আছে, তবে তা সব সার্কেলে এখনও কার্যকর নয়। নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা ও করের ওপর বিলম্ব সুদ দিতে হয়। তাই সময়মতো রিটার্ন দাখিল করা ভালো। তবে বিশেষ কোনো কারণে সময়মতো রিটার্ন দাখিল না করা গেলে নিজের সার্কেলের উপ-কর কমিশনারের কাছে আবেদন করে সময় নেওয়া যায়। এ বছর করদাতাদের বাইরে ৩৮ ধরনের কাজ, যেগুলো আগে টিআইএন সনদ দিয়ে করা যেত, সে ক্ষেত্রেও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

যিনি চলতি করবর্ষে প্রথমবার রিটার্ন দাখিল করবেন, তিনি আগামী বছরের ৩০ জুন তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। ধরুন, মোহাম্মদ মালিককে ২০২২-২৩ করবর্ষে প্রথমবারের মতো রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তিনি আগামী বছরের ৩০ জুন তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এ ছাড়া যাঁরা কয়েক বছর আগে রিটার্ন জমার উপযুক্ত হয়েছেন, কিন্তু তা করেননি, তাঁরা এ বছর সব রিটার্ন একসঙ্গে দাখিল করতে পারবেন। এ বছর করদাতাদের জন্য জরিমানা ছাড়া আগের আয় বছরের রিটার্ন দাখিলেরও সুযোগ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ধরা যাক, শামীমা নাসরিনের ২০১৯-২০ করবর্ষ থেকে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তিনি এ পর্যন্ত কোনো রিটার্নই দাখিল করেননি। তাহলে চলতি করবর্ষে তিনি সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। আর ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ করবর্ষের রিটার্ন সাধারণ পদ্ধতিতে দাখিল করতে পারবেন।

ব্যক্তি করদাতার আয়কর রিটার্ন:আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদ এবং কর সম্পর্কিত তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপনই হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। দুই ধরনের লোককে আয়কর দিতে হয়। প্রথমত, যাঁদের করযোগ্য আয় আছে। আর যাঁদের ব্যবসা বা ব্যক্তিগত কাজে টিআইএন প্রয়োজন হয়, তাঁদের অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে। বর্তমানে রিটার্ন দাখিলের দুটি পদ্ধতি রয়েছে- সাধারণ পদ্ধতি ও সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি। সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে করদাতা নিজের আয় নিজে হিসাব করে আয়কর নিরূপণ করেন।

কারা রিটার্ন দাখিল করবেন:যে কোনো ব্যক্তির আয় যদি বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এ ছাড়া কোনো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি হলে তাঁকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কোনো নারীর বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি হলে তাঁকেও রিটার্ন দাখিল করতে হবে। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা হলে এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আয় পৌনে ৫ লাখ টাকা হলে তাঁকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

রিটার্ন দিতে যা লাগে:রিটার্ন জমার সময় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট ইত্যাদি।

ভুল সংশোধনী রিটার্ন:সব শর্ত পূরণ করে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলের পর যদি কোনো করদাতা দেখেন যে, অনিচ্ছাকৃত ভুলে কম আয় দেখানো হয়েছে অথবা বেশি রেয়াত বা কর অব্যাহতি বা ক্রেডিট নেওয়া হয়েছে, তাহলে তিনি ভুল সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এমনকি অন্য যে কোনো হিসাব বা কর পরিগণনা কম বা বেশি হলেও সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করা যায়। উপ-কর কমিশনারের কাছে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে।

ন্যূনতম কর:করমুক্ত আয়সীমার বেশি আয় থাকলে নূ্যনতম কর দিতে হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অবস্থিত করদাতার নূ্যনতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি করপোরেশনে অবস্থিত করদাতার নূ্যনতম কর চার হাজার। সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্য যে কোনো এলাকায় অবস্থিত করদাতার নূ্যনতম কর তিন হাজার টাকা। কে কোন রিটার্ন ফরম ব্যবহার করবেন:রিটার্ন দাখিলের জন্য একাধিক ফরম রয়েছে। ২০১৬ সালে আইটি-১১গ ২০১৬ নামে নতুন রিটার্ন ফরম চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য রিটার্ন ফরম ব্যবহার করা যাবে। সব ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা আইটি-১১গ ২০১৬ রিটার্ন ফরম ব্যবহার করতে পারবেন। যেসব ব্যক্তি করদাতার আয় ৪ লাখ টাকা এবং সম্পদ ৪০ লাখ টাকার কম, তাঁরা আইটি-ঘ ২০২০ ফরম ব্যবহার করবেন।