সরকারি কিছু সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমায় ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করের বিধান অবশেষে থাকছে না। সরকার থেকে ৪৪ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার বিধান রাখা হয় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। কিন্তু নানা মহলের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার। জাতীয় সংসদে গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। যাদের করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, তাদের ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর জমা দিতে হবে।তবে পরবর্তীতে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি আপাতত যৌক্তিক হবে না। করমুক্ত আয়সীমা থাকায় এই ন্যূনতম করের ধারণাটি করনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলেও মত দেন তাঁরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটসহ (পিআরআই) বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংস্থা এ ধরনের কর প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে ও মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের করের বিধান বাদ দিতে বলেছেন বলে জানা গেছে।জাতীয় সংসদ ভবনে গত ১ জুন একাদশ জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৫ জুন অর্থবিল এবং ২৬ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস করা হবে। অর্থ বিল পাসের দিন সংশোধনী এনে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি বাতিল করা হতে পারে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত সাধারণ ব্যক্তি আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, এর পরের ৩ লাখের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখের ওপর ১৫ শতাংশ, তার পরের ৫ লাখের জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে। তাছাড়া এলাকা অনুসারে ব্যক্তির ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ন্যূনতম কর আগের মতোই ৫ হাজার টাকা থাকছে। অন্য শহরে এটি ৪ হাজার টাকা এবং পৌরসভা এলাকায় ৩ হাজার টাকাই রাখা হয়েছে।দেশে বর্তমান প্রায় ৮৮ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারী রয়েছেন। এদের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেন প্রায় ৩২ লাখ। রিটার্ন জমা দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৮ লাখের করযোগ্য আয় নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব মতে, এই ৮ লাখ মানুষ ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর পরিশোধ করলে সরকার অতিরিক্ত ১৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। তাছাড়া সব টিআইএনধারীর ওপর ন্যূনতম কর আরোপ করা হলে প্রায় ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে।প্রস্তাবিত বাজেট অনুসারে, মোট ৪৪টি সরকারি পরিষেবা পেতে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।যেমন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে, কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট পেতে, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি বা ফ্ল্যাটের দলিল করার ক্ষেত্রে, ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদনের সময়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করতে গেলে এবং সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে ইত্যাদি।