বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার সময় শেষ হয়ে গেছে। নিয়মিত রিটার্ন দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পরও বিশেষ বিবেচনায় ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে সময় পেরিয়ে গেলেও ৬৩.২৬ শতাংশ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি; সংখ্যার হিসাবে যার পরিমাণ ৬৩ লাখ ৬ হাজার ৯১৯। মাত্র ৩৭ শতাংশ টিআইএনধারী করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন।
এনবিআর থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছেন ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৮১ জন। যার বিপরীতে আয়কর এসেছে ৫ হাজার ৯০১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার করদাতা ই-টিআইএন রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। অথচ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৩ লাখ ৬ হাজার ৯১৯ জন রিটার্ন দাখিল করেননি।
চলতি অর্থবছরে সময় বৃদ্ধির আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়, তারপরও জরিমানাসহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ের পরেও রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা যোগ করলেও তা ৪০ লাখের বেশি হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে হিসাব বিবেচনায় নিলেও ৫৮ লাখ টিআইএনধারী ব্যক্তি রিটার্ন দাখিলের বাইরে থেকে যাবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া না পর্যন্ত কত শতাংশ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন কিংবা করেননি সেটা বলা যাবে না। আশা করছি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি পাবে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৮১টি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রিটার্ন জমা বেড়েছে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৪২০টি, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২১ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ করদাতা অনলাইনে বা ই-রিটার্ন সার্ভিস ব্যবহারের মাধ্যমে কর প্রদান করেছেন।
রিটার্ন বৃদ্ধির সঙ্গে আয়করের পরিমাণও কিছু বেড়েছে। জমা দেওয়া রিটার্নের বিপরীতে আয়কর আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৯০১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা; যা আগের বছরে ছিল ৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আয়কর আদায় বেড়েছে ১ হাজার ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
২০২১-২২ করবর্ষে জানুয়ারি পর্যন্ত ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৬৬১ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিলেন। যদিও সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ২৬৩টি রিটার্ন দাখিল হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এর আগে ব্যবসায়ী ও করদাতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় দুই মাস বৃদ্ধি করে ৩১ জানুয়ারি করা হয়েছিল। তার আগে কর সেবা মাস হিসাবে সারা দেশে এনবিআরের আওতাধীন ৩১টি কর অঞ্চলে ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জোন ভিত্তিক বুথ, ই-টিআইএন ও তথ্য সেবা বুথের মাধ্যমে কর সেবা দেওয়া হয়।
নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের পরে রিটার্ন দাখিলে সময় বৃদ্ধির আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি। নির্ধারিত সময়ের পর রিটার্ন দাখিল করতে হলে জরিমানা ও কর অব্যাহতির সুবিধা বাদ দিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আইন অনুযায়ী জরিমানা, করের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ কিংবা করের টাকার ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ গুনতে হবে করদাতাদের।