সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করায় রাজস্ব হারিয়েছে সরকারআরও এক মাস বাড়ল রিটার্ন জমার সময়এনবিআর আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের যাত্রা শুরুনকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর দাবিঅনলাইনে ৯৬ ঘণ্টা ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ থাকবে
No icon

চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায় ভারত

সরবরাহ ব্যবস্থায় চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পরিকল্পনা করছে ভারত। সেই পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নীতি আয়োগকে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া ভারত সরকারের জননীতিবিষয়ক শীর্ষ চিন্তাশালা), যারা প্রাথমিকভাবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করবে। সেই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক কারণে যেন সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত না হয়, তার পথ অনুসন্ধানে নতুন প্রস্তাব দেবে তারা। ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ এখন দূরের দেশ থেকে পণ্য কেনার পরিবর্তে কাছের দেশ থেকে পণ্য কেনার কথা ভাবছে। যে দেশ থেকে পণ্য নেওয়া হবে তারা যেন বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করারও চেষ্টা করছে এই দেশগুলো। এর মধ্য দিয়ে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায় তারা। বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, নীতি আয়োগ শুল্ক, অশুল্ক বাধা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর পরিবর্তনে নীতি সুপারিশসহ কর্মপরিকল্পনা পেশ করবে।

এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে ভারত-চীনের বাণিজ্য পর্যালোচনা করতে এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, তারা ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থায় চীনের বড় ভূমিকা আছে। সে কারণে ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই নির্ভরশীলতা কমাতে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কোভিড-১৯ মহামারি ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থা ও উৎপাদন নেটওয়ার্কের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। সে কারণে সরবরাহ ব্যবস্থার বহুমুখীকরণ জরুরি।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে চীনের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা বিশ্লেষণ ও তার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করা। এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থা কেমন, তার তুলনামূলক বিশ্লেষণও করবে তারা। এ ছাড়া যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে এবং যেসব পণ্যের চীনে বড় বাজার আছে, তা-ও খতিয়ে দেখবে সেই কমিটি। রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই তা করা হবে। এ ছাড়া প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত কোথায় কোথায় পিছিয়ে আছে এবং সেই ঘাটতি পূরণে কী পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রতিযোগিতামূলক পণ্য তৈরিতে দেশীয় মানবসম্পদ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। সবচেয়ে ভালোভাবে তা করার কী উপায়, সেই সুপারিশ দেবে পরামর্শক কমিটি।

নীতি আয়োগের তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি ছিল চীনের সঙ্গে। গত অর্থবছরে দেশটি বিশ্বে ৪৫০ বিলিয়ন বা ৪৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে; একই সময়ে তারা আমদানি করেছে ৭১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ ওই বছরে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর ৩২ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩১০ কোটি ডলারের ঘাটতি শুধু চীনের সঙ্গে।

 ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত চীন থেকে মূলধনি পণ্য আমদানি করেছে ৪৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের; অন্তর্বর্তীকালীন পণ্য আমদানি করেছে ৩ হাজার কোটি ডলারের; ভোগ্য পণ্য ৯৪০ কোটি ডলারের; কাঁচামাল ১০০ কোটি ডলারের। অন্যদিকে ভারত চীনে অন্তর্বর্তীকালীন পণ্য রপ্তানি করেছে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের; কাঁচামাল রপ্তানি করেছে ৬০০ কোটি ডলারের; ভোগ্য পণ্য ৩৪০ কোটি ডলারের; মূলধনি পণ্য ২৪০ কোটি ডলারের।