আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব কোম্পানির প্রকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদন পেতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কোম্পানির বার্ষিক রিটার্নের সঙ্গে সঠিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা না দিলে তা এনবিআরের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
কোম্পানিগুলো বার্ষিক রিটার্নের সঙ্গে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের মাধ্যমে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদন হিসাববিদদের প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) ওয়েবসাইটে রাখতে হবে। তারপর ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেমের (ডিভিএস) মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা এনবিআরের জমা করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি মিলিয়ে দেখবে।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন ডিভিএসে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক হিসাব–নিকাশের বছর শেষ হয় দুই শ্রেণিতে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির বছর শেষ হয় ডিসেম্বর মাসে। ওই সব কোম্পানি ওই সময়ের পর নিরীক্ষা প্রতিবেদনসহ আয়কর রিটার্ন দেয়। দেশে এ ধরনের কোম্পানি আছে ৩০০ থেকে ৪০০। আর বাকি সব কোম্পানির আর্থিক হিসাব-নিকাশের বছর শেষ হয় জুন মাসে। ওই সব কোম্পানি সাধারণত পরের ছয় মাসের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদনসহ আয়কর বিবরণী জমা দেয়।
গত বছরের ১২ নভেম্বর ডিভিএস ব্যবহারে এনবিআর ও আইসিএবির মধ্যে চুক্তি হয়। এরপর গত কয়েক মাসে শুধু ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোই নিরীক্ষা প্রতিবেদনসহ আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছে।
এ ছাড়া চলতি বছর বহু নন–ফাইলার কোম্পানিকে আয়করের আওতায় এনে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিয়েছে বিভিন্ন কর অঞ্চল। এসব কোম্পানি এত দিন করের আওতার বাইরে ছিল।
ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলো আগামী কয়েক মাসজুড়ে আয়কর রিটার্ন দেবে এবং তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন আইসিএবির সিস্টেমে রাখতে হবে। সব মিলিয়ে কোম্পানির প্রকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে। এনবিআরের কর বিভাগের এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর রিটার্ন জমাকারী প্রায় ২৮ হাজার কোম্পানির অর্ধেকের কম কোম্পানি জাল নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়। আইসিএবি সূত্রে জানা গেছে, আইসিএবির সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদেরা প্রতিবছর ১৬ হাজারের মতো নিরীক্ষা প্রতিবেদনে সই করেন। এর মানে বাকি ১২ হাজারের মতো কোম্পানি এত দিন ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ব্যবস্থার কারণে সরকারের রাজস্বপ্রাপ্তি ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এত দিন কে বা কারা নিরীক্ষা প্রতিবেদন করতেন, তা জানা যেত না। ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা করার কারণে কোম্পানির আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া যেত না। কর কর্মকর্তারা যদি নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ে আইসিএবির ডিভিএস ব্যবহারে কঠোর হন, তাহলে রাজস্ব আদায় নিঃসন্দেহে বেড়ে যাবে। ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়ে পার পাওয়া যাবে না।