করজাল বাড়াতে নজর এনবিআরেরএক কোটি ৩১ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে সাদিক অ্যাগ্রোরিটার্নের প্রমাণপত্র জমা না দিলে গাড়িতে বাড়তি করকরমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত ছিলকর-ভ্যাটের চাপ আরও বাড়বে
No icon

ভল্টে জমার পদ্ধতি নিয়ে এনবিআরের অসন্তোষ

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম ও সিলেট শাখার ভল্টে আটককৃত স্বর্ণ জমার পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে যে পদ্ধতিতে স্বর্ণ জমা রাখা হয় অন্যান্য শাখার ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রস্তাব দিয়ে আসছে এনবিআর। কিন্তু প্রস্তাবটি কার্যকর না হওয়ায় এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও পুরোনো পদ্ধতিতেই সেফ ভল্টে স্বর্ণ জমা রাখা হচ্ছে। উল্লিখিত অফিস দুটিতে শুধু লট নম্বরসহ রিসিভ কপি ইস্যু করা হয়, তাতে স্বর্ণের বিবরণ উল্লেখ থাকে না। এ কারণে চট্টগ্রাম, সিলেট শাখার ভল্টে রক্ষিত ২৮৭ কেজির বেশি স্বর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বুলিয়ান ভল্টে স্থানান্তর করা প্রয়োজন বলে এনবিআর মনে করছে।তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে আটককৃত স্বর্ণের গুণগতমান যাচাই করে এনবিআরর অধীন শুল্ক গোয়েন্দা। দৈবচয়ন ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষা করে পরিমাণ ও শুদ্ধতায় (ক্যারেট) হেরফেরের কথা জানিয়ে এনবিআরে প্রতিবেদন জমা দেয়। শুল্ক গোয়েন্দার তৎকালীন প্রতিবেদনে বলা হয়, ভল্টে জমা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চাকতি ও আংটি মিশ্র বা সংকর ধাতু পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক শতকরা ৮০ ভাগ স্বর্ণ হিসাবে গ্রহণ করার প্রত্যয়নপত্র দিলেও সেখানে শতকরা ৪৬ ভাগ স্বর্ণ পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই স্বর্ণ জমা রাখার পদ্ধতি নিয়ে এনবিআর-বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়।

জানা গেছে, বিমানবন্দরে কাস্টমস বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সময়ে সময়ে চোরাচালানের দায়ে স্বর্ণ আটক এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে। এরপর স্বর্ণ অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা হয়। পরে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক হয়তো স্বর্ণসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফেরত দেওয়া হয়, অথবা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। আটককৃত স্বর্ণ বার আকারের হলে তা রিজার্ভে যোগ করে এর বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর গহনার ক্ষেত্রে নিলাম ডাকা হয়। স্বর্ণের গহনা রিজার্ভে নেওয়া হয় না। আর নিলামের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং কাস্টমসের কর্মকর্তাদের রাখা হয়।কাস্টমসের আটককৃত বা নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি আদেশে বলা আছে, মূল্যবান ধাতু (স্বর্ণ, রুপা, হীরা, প্লাটিনাম বা অনুরূপ মূল্যবান ধাতু বা জুয়েলারি) এবং বৈদেশিক মুদ্রা কাস্টমস গুদামে জমা হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে পুলিশ পাহারায় কাছের বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হবে। ৭ দিনের মধ্যে জমা দেওয়া সম্ভব না হলে বিলম্বের কারণ উল্লেখ করে এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্বর্ণ বা বৈদেশিক মুদ্রা কাস্টমসের মূল্যবান গুদামে সংরক্ষণ করতে হবে।

শনিবার ঢাকা কাস্টমসের মূল্যবান গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনার পর ভল্টে স্বর্ণ জমা দেওয়ার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। আটককৃত বা নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি আদেশ অনুসরণ না করে আটককৃত স্বর্ণ কেন দীর্ঘদিন গুদামে রাখা হলো তা নিয়ে সব মহলে প্রশ্ন উঠেছে।তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চোরাচালানের দায়ে আটক স্বর্ণ কাস্টমসের কাস্টোডিয়ান শাখা থেকে স্টিল বক্সে ঢুকিয়ে যৌথ স্বাক্ষর করে সিল করা হয়।এরপর প্রতিটি বক্স সাদা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ৬টি পয়েন্টে সিলগালা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় অস্থায়ী সেফ ভল্টে জমা রাখা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখা একটি লট নম্বর এবং একটি রিসিভ কপি (সেফ ডিপোজিট রিসিপ্ট) ইস্যু করে, যাতে শুধু একটি নম্বর উল্লেখ থাকে। কিন্তু ইস্যুকৃত কপিতে স্বর্ণের গুণগতমান, সত্যতা, সংখ্যা ও ওজন সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকে না। এমনকি সিলকৃত বক্সের ভেতরে স্বর্ণবার বা অন্য বস্তু আছে কিনা তাও উল্লেখ করা হয় না। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটককৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট শাখা জমা রাখে।