দরপতনের শীর্ষে জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ স্টক এক্সচেঞ্জেপ্রতিযোগীদের কম শুল্কই বড় চ্যালেঞ্জরিটার্ন জমা না দেওয়া টিআইএনধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশবেশি দাম দিয়ে নিলামে ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক১৮৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১৮৭৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি
No icon

বদলির আদেশ ছেঁড়ায় এনবিআরের ১৪ জন সাময়িক বরখাস্ত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক, ভ্যাট ও কর বিভাগের মোট ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এনবিআরের জারি করা বদলির আদেশ অবজ্ঞা করে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এনবিআর ভাগ করার অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে গত মে ও জুন মাসে আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তাদের প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা রয়েছেন। অন্যরাও আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।গতকাল মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়ে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ১৪ জনের মধ্যে আয়কর বিভাগের ৯ জন এবং শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনজনের পদবি অতিরিক্ত কমিশনার, পাঁচজন যুগ্ম কর কমিশনার ও চারজন উপকর কমিশনার ও দু জন রাজস্ব কর্মকর্তা। তারা এনবিআরের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শুল্ক-ভ্যাট ও কর অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন।

আইআরডির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ২২ জুন এনবিআরের জারি করা বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী তাদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চাকরি থেকে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তবে তারা সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।গতকাল দুপুরে প্রথম দফায় আটজন ও বিকেলে দ্বিতীয় দফায় ছয়জনসহ মোট ১৪ জনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি হয়। অতিরিক্ত কমিশনারদের মধ্যে রয়েছেন ভ্যাট বিভাগের নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিফাত-ই-মরিয়ম এবং কর অঞ্চল ৮-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা। যুগ্ম কমিশনারের মধ্যে রয়েছেন কর অঞ্চল-২-এর মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫-এর মুরাদ আহমদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন, নোয়াখালী কর অঞ্চলের মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা ও কক্সবাজার কর অঞ্চলের আশরাফুল আলম প্রধান। চার উপকর কমিশনার হলেন শিহাবুল ইসলাম, রংপুরের নুশরাত জাহান শমী, কুমিল্লার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল ও এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. শাহাদাত জামিল। দুই রাজস্ব কর্মকর্তা হলেন ঢাকা উত্তরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সবুজ মিয়া ও খুলনার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্মতা শফিউল বশর।গত ২৪ জুন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের নিচে দুটি বদলি আদেশকে প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক দাবি করে তা ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানান এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর জেরে এই ১৪ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এর আগে তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের দু জন সদস্যসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

গত ১২ মে এনবিআরকে ভেঙে রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন নামে দুটি বিভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে অধ্যাদেশ বাতিল ও এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ২২ জুন থেকে এই কর্মসূচি কঠোর হতে থাকে। এক পর্যায়ে ২৮ ও ২৯ জুন কমপ্লিট শাটডাউন করে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা। এর পর শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ আন্দোলন হয়। গতকাল যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তারা সবাই ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন।আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে সম্প্রতি প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এনবিআর চেয়ারম্যান তাদের বলেছিলেন, তিনি ক্ষমা করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে রাষ্ট্র ক্ষমা করবেন কিনা, তা তিনি জানেন না। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এনবিআরের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চেয়ারম্যান ক্ষমা করেছেন, কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তাতে এনবিআরের কিছু করার থাকে না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে হয়তো এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।