আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা নিয়ে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এজন্য সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে এনবিআর। তবে বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) কিছু বিষয়ে আপত্তি এবং এক সভাকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। এফবিসিসিআইয়ের অভিযোগ, ২ মে এনবিআর নোটিস দিয়েও সভার আয়োজন করেনি। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে যেসব বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল তার জবাবও এনবিআর দেয়নি। ৫ মে চিঠি দিয়ে সংগঠনটি এনবিআরকে এ অভিযোগ জানায়।
এর জবাবে এনবিআর দ্বন্দ্বের জন্য এফবিসিসিআইকেই দোষারোপ করে চিঠি দেয়। এনবিআরের মূসক আইন ও বিধি শাখার দ্বিতীয় সচিব মো. তারেক হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩১ মার্চ অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভ্যাট নির্ধারণের বিষয়ে ২ মে এনবিআর একটি সভা আহ্বান করে। এ সভায় এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত হন। কিন্তু সভা চলাকালীন এফবিসিসিআইয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের পর তারা সভার তারিখ পুনর্নির্ধারণের জন্য অনুরোধ করেন। সুতরাং নোটিস প্রদান করে সভা আয়োজন না করার অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে ধারণা করা যায় যে এফবিসিসিআই মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়নে পুনরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ভ্যাট অব্যাহতি সীমা ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা, টার্নওভার করসীমা ৮০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা এবং টার্নওভার করহার ৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ করা এবং ভ্যাটের হার চার স্তরে অর্থাৎ ৫ শতাংশ, ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হলে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো তাতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে নতুন ভ্যাট আইনের প্রভাব মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই এতে আগ্রহ দেখায়নি। তাই নতুন আইনের প্রভাব মূল্যায়ন করা যায়নি। তবে ১৯৯১ সাল থেকে ভ্যাট এ দেশে রয়েছে। পুরনো আইনের জায়গায় নতুন আইন প্রতিস্থাপিত হলে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটা এনবিআরের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের মূল্যায়ন কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের পূর্বশর্ত হতে পারে না।
কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনটি টার্নওভার কর ৩ শতাংশ এবং ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর কোন কোন পণ্যের ওপর প্রযোজ্য হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চায়। পাশাপাশি নতুন আইনে কর রেয়াত থাকবে কিনা আর থাকলেও সেটা কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হবে। তবে এসব বিষয়ে এনবিআর থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজেটে অর্থমন্ত্রী এ বিষয় উপস্থাপন করবেন।
এদিকে গত শনিবার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এনবিআরকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগেই প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। এ আইনের যেসব ধারায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়েছেন, তা নিয়ে এনবিআরকে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসে সমাধান করতে হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে আবারো বৈঠকের আহ্বান করা হবে। ১৫ মে এ বৈঠক হবে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের আয়কর সাব-কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা ভ্যাট আইনের বিরোধিতা কখনই করিনি। কিন্তু এ আইন বাস্তবায়নে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, তা আগেই আলোচনা করে সমাধান করে নেয়া ভালো। এ বিষয়ে আমরা সবসময় এনবিআরকে সহযোগিতা করে আসছি বলে জানান তিনি।