অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছর ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করে নির্ধারিত সময়ের আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর ভবনে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন। এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ এনবিআরের সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইনের যেসব ধারায় ব্যবসায়ীদের আপত্তি রায়েছে তা নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এনবিআরকে সংলাপে বসে সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কোনো দুর্বলতা মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, জিডিপির তুলনায় আমাদের ট্যাক্স অনেক কম। ১০ থেকে এখন ৯ এ নেমে এসেছে। এটা অবশ্যই বাড়ানো দরকার। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত কম হলেই যে প্রবৃদ্ধি কমবে এটা ঠিক নয়। আমাদের অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশই ইনফরমাল ইকোনমি। এই ইনফরমাল ইকোনমি জিডিপিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, গত কয়েক বছরে কর রাজস্ব ভালোই বেড়েছে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে কর আদায়ের পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সেটার লক্ষ্য ধরা আছে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। হয়ত লক্ষ্যের পুরোটা আদায় হবে না। কিন্তু কাছাকাছি তো হবে। হিসাব করলে দেখা যাবে, এই কয় বছরে কর আদায়ের পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে।
এ সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কানাডার সমান বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অংশীদার হবে এমন প্রভাবশালী ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গত ৬ মে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আইএমএফ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ করেছে তার আলোকে ব্লুমবার্গের করা বিশ্লেষণে এ তথ্য পকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, ওই বিশ্লেষণে দেখা যায় আগামী অর্থবছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আর সেই প্রবৃদ্ধিতে দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কানাডা অবদান রাখবে এক শতাংশ। থাইল্যান্ড-স্পেনও এক শতাংশ করে অবদান রাখবে।
আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের এ অবদান অব্যাহত থাকবে বলে ব্লুমবার্গের গবেষণার বরাত দিয়ে তথ্য দেন অর্থমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, সে তথ্যের ভিত্তিতেই আমি বলছি, প্রবৃদ্ধিতে আমরা কানাডার সমান। স্পেন-থাইল্যান্ডের সমান। আর এটা আমার কথা নয়, আইএমফের কথা। বিশ্ব ব্যাংকের কথা।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আর সেই প্রবৃদ্ধিতে দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কানাডা অবদান রাখবে ১ শতাংশ। থাইল্যান্ড ও স্পেনের অবদানও হবে ১ শতাংশ করে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর প্রবৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, তাদের কাজ তারা করবে; আমার কাজ আমি করব। তবে তাদের হোমওয়ার্ক করে তথ্য দেয়া উচিৎ। আমি তথ্য নিয়ে কথা বলি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি কারো নাম বলছি না, তবে অনেকেই অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলেন। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আসেন গোলটেবিল আলোচনায় বসি। আমি বা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে সেটা যে সঠিক তা প্রমাণ করে ছাড়ব।
তিনি বলেন, দুঃখ একটাই, বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ-এডিবি আমাদের প্রশংসা করছে। আর আমাদের এখানকার কয়েকজন সেটা মেনে নিচ্ছেন না বা মেনে নিতে পারছে না। এ সব সংগঠনের কাজই সরকারের সমালোচনা করা। তারা বছরে কিছু প্রোগ্রাম করে আর সরকারের সমালোচনা করে। এটা তাদের বাৎসরিক রুটিন হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।