দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

সুনিশ্চিত হুমকিতে বিশ্ব অর্থনীতি

মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক চীনের অর্থনীতিতে দুর্যোগ নামার পর আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, বিমান চলাচল ও কারখানা বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দা আর আশঙ্কা নয়, বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা। ১৯৮৯ সালে জিডিপির প্রান্তিক তথ্য প্রকাশ শুরুর পর এই প্রথম ধসের মধ্যে পড়ল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক প্রধান ডেভিড উইলকক্স সিএনএন বিজনেসকে বলেন, ১০ দিন আগেও বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দিকে মোড় নিচ্ছে কিনা তা নিয়ে বাস্তব অনিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু এখন এটি নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই।

গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌনে দুই লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা, কারফিউ জারি ও জনসমাগম বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনেক দেশ। বছরের প্রথম দুই মাসে কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার কারণে চীনা অর্থনীতির প্রতিটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের খুচরা বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে দেশটির শিল্প উৎপাদন সে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ শতাংশ এবং স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগ প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের গ্লোবাল ম্যাক্রো রিসার্চের পরিচালক বেন মে সিএনএনকে বলেন, চীনের সবকিছু বন্ধ করার প্রভাব এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। অন্য দেশগুলোতে পরিস্থিতি যদি ভিন্নও হয় প্রবৃদ্ধির ক্ষতি এড়ানো যাবে না।

বিপর্যস্ত চীন যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছে, তখন পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। গোল্ডম্যান সাকস যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমার পূর্বাভাস দিয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোনো প্রবৃদ্ধি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এপ্রিল-জুন সময়ে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করছেন আইএনজির অর্থনীতিবিদরা।

পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের অনাবাসী জ্যেষ্ঠ ফেলো উইলকক্স বলেন, ইদানীং যে বিষয়টি সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো, আর্থিক বাজারের চলমান প্রতিকল পরিস্থিতির পরিবর্ধক হয়ে ওঠার উচ্চ ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে।

অর্থনীতির যন্ত্রণা লাঘবে গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে। বেঞ্চমার্ক সুদের হার কমিয়ে শূন্যের কাছাকাছি নামিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোর জন্য সস্তায় মার্কিন ডলার কেনার সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত সোমবার চলমান সহযোগিতার সঙ্গে আর্থিক বাজারে আরো ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে নিউইয়র্ক ফেড।

শেয়ারবাজার যখন ডুবন্ত, ঋণ বাজার যখন চড়াই-উতরাইয়ে এবং তারল্য সংকট যখন চরমে, তখন বৈশ্বিক মন্দা যে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে সবাই একমত হচ্ছেন। এখন প্রশ্ন শুধু একটাই, পরিস্থিতি আরো কতটা খারাপ হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ কেভিন হাসেট সিএনএনের পপি হারলোকে বলেন, শতভাগ বৈশ্বিক মন্দার পরিস্থিতির প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করছি আমরা।