অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ দাম বাড়াচ্ছে পাইপেরমেট্রোরেলের ভাড়ায় বসছে ১৫% ভ্যাটকৃষি ও নিত্যপণ্যে শুল্ক না বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকরছাড় কমাতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীবাড়তি রাজস্ব সংগ্রহে করছাড় ও অব্যাহতি কিছুটা কমাবে এনবিআর
No icon

দেশে চলছে কেবল দাম বাড়ানোর হিড়িক

মনে হচ্ছে, দেশে এখন দাম বাড়ানোর হিড়িক চলছে। আগে কেবল সুযোগ বুঝে চাল, তেল, পেঁয়াজ, নুনের মতো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হতো। এখন সরকার ও তার সংস্থাগুলো এ প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশের বেশি বাড়ানোর হয়েছে। এর ধকল না কাটতেই খবর এসেছে পানির দাম ২৫ শতাংশ বাড়াতে চায় ঢাকা ওয়াসা। চলতি মাসেই বাড়ানো হতে পারে বিদ্যুতের দাম। গণশুনানিকালে বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি পাইকারি বিদ্যুতের দাম প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সংরক্ষিত কবরের ওপর আবার কবর দেওয়ার জন্য ফি বাড়িয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন । সংরক্ষিত কবরের ওপর কবর দেওয়ার জন্য ফি ২০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে বনানী কবরস্থানে ৫০ হাজার টাকা এবং অন্য কবরস্থানে ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশজুড়ে সরকারি সংস্থাগুলো তাদের পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির এক নির্মম ও অশোভন প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। কারণ হিসাবে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ, টাকার বৈদেশিক বিনিময়ে মূল্যহ্রাস, এমনকি আইএমএফের ঋণের শর্তের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোই কি একমাত্র পথ? দাম বাড়ানো সহজ হলেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা সবারই জানা আছে।সাধারণভাবে সরকারি পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর পেছনে যুক্তি দুটি। একটি সামষ্টিক , অন্যটি ব্যষ্টিক । সামষ্টিক যুক্তিটি হলো সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনা। অন্য কথায় বলা যায়, বাজেটঘাটতি সীমিত রাখা। ব্যষ্টিক যুক্তিটি হলো সরকারি পণ্য ও সেবার খরচ পুনরুদ্ধার ।

বর্তমান সরকারি পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির আসল কারণ হলো কাপড়ের পরিমাপ না ভেবে পোশাক বানানো। বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-২০ সালে বাংলাদেশের গড় কর রাজস্বের অনুপাত ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ; একই সময়ে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে এ অনুপাত ছিল যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৬৭, ২১ দশমিক ৫, ১৪ দশমিক ৮৮ ও ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

">কর রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতার নানাবিধ কারণের মধ্যে রয়েছে ক. সীমিত আয়কর জাল, শুল্ক ও করাদি থেকে বিপুলসংখ্যক পণ্যের অব্যাহতি; খ. ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ, ফলে সঠিক করনীতি প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না; গ. ব্যাপক চাঁদাবাজি; ঘ. অসৎ রাজস্ব কর্মকর্তা, আয়কর উপদেষ্টা, ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট সমন্বয়ে ঘটিত সিন্ডিকেট, যারা সৎ করদাতাদের হয়রানি করে কর প্রদানে নিরুৎসাহিত করে ও অসৎ ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকি দিতে সহায়তা করে থাকে।

কর রাজস্ব আদায় আশানুরূপ না হওয়ার প্রেক্ষাপটে উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার দেশি-বিদেশি ঋণসহায়তা নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ সুদের বিদেশি ঋণ। শুধু তা-ই নয়, হাত দিয়েছে বিপিসি ও অন্যান্য করপোরেশনের মেয়াদি আমানতে। তাই সিপিডি উল্লিখিত ২০১৫-২১ সালের বিপিসির মুনাফা ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার অবস্থা হয়েছে কাজির গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নাই। এভাবে আপৎকালে ব্যবহারের সরকারের সম্পদ ধ্বংস করে অর্থনীতিকে বিপন্ন করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত প্রভুদের পারিবারিক তৈজসপত্র বিক্রির কথা মনে করিয়ে দেয়।

পাশাপাশি সরকারি আবর্তক ও উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয়ের চূড়ান্ত করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বানরের পিঠা ভাগের মতো জনগণের অর্থ সরকারঘনিষ্ঠ লোকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তাই এখন সরকার পরিচালনার অর্থ সরকারের নেই। সে দায় মেটানোর জন্য সরকারি পণ্য ও সেবার মূল্য মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি পণ্য ও সেবার এসব মূল্যবৃদ্ধি অন্য সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে এখন সাধারণ মূল্যস্ফীতির পালে জোর বাতাস দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে টাকার অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকবে এবং অতি মূল্যস্ফীতি অনিবার্য হয়ে উঠবে।