দেশে উৎপাদিত প্রসাধনীতে করের বোঝা, আমদানিতে ছাড়ভোজ্যতেল আমদানিতে কমলো ভ্যাটখেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশঅনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল ও নিবন্ধন করবেন যেভাবেনবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেওয়া হচ্ছে ১০ বছরের কর অব্যাহতি
No icon

অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ দাম বাড়াচ্ছে পাইপের

তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা কিংবা বড় প্রকল্পে গ্যাস লাইন, বয়লার লাইন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ফায়ার হাইড্রেন্ট ও পাওয়ার প্লান্টের অপরিহার্য উপাদান পাইপ। দেশে উৎপাদন না হওয়ায় অত্যাবশ্যকীয় এ সুরক্ষা পণ্য আমদানি করতে হয়। এ খাতের আমদানিকারকরা বলছেন, বাড়তি মূল্য ধরে শুল্কায়নের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাইপ আমদানি। আমদানি ব্যয় বেড়ে পাইপের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে শিল্পকারখানার ব্যয় বাড়ছে।আমদানিকারকদের দাবি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে কার্বন স্টিল সিমলেস পাইপ আমদানিতে অস্বাভাবিক শুল্কায়ন মূল্য আরোপ করেছে। অন্যদিকে সম্প্রতি ডলারের দাম অনেক বাড়ানো হয়েছে। এতে বেশ বিপাকে পড়ছেন আমদানিকারকরা। এ খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে শুল্কায়ন মূল্য কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার দাবি জানান তারা।তারা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সিমলেস পাইপ, এমএস পাইপ, ইআরডব্লিউ পাইপ, বয়লার টিউব, জিআই পাইপসহ সব ধরনের পাইপের প্রতি টনের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ ডলার। এ দরেই আমদানি করা হচ্ছে। আগে আমদানি মূল্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হতো। এরপর দু-তিন বছর আমদানি মূল্য ৮৫০ ডলার হিসাব করে শুল্ক আদায় করা হয়েছে। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হয়। ওই সময় প্রতি টন পাইপে এক লাফে শুল্কায়ন মূল্য ৪৫০ ডলার বাড়ানো হয়েছে। প্রতি টন পাইপের আমদানি মূল্য ১৩শ ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে, যা প্রায় দ্বিগুণ। অথচ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে যে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে আমদানি মূল্য যাচাই করতে পারে কিংবা চীন বা রপ্তানিকারক দেশগুলোর কাছ থেকেও মূল্য যাচাই করতে পারে। এসব না করে এনবিআর শিল্পের অতিপ্রয়োজনীয় এ পাইপের ওপর অযৌক্তিক শুল্ক আরোপ করেছে। এতে আমদানিও কমেছে। তাতে কমেছে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয়।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। প্রতি টন ৬৫০ ডলারের পাইপ আমদানি করে কেন ১২শ থেকে ১৩শ ডলারে শুল্কায়ন করা হবে। এটা আমদানিরকারকদের ওপর বাড়তি চাপ।তিনি বলেন, অতিরিক্ত শুল্কের কারণে পাইপের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে সরাসরি ভোক্তার ওপর। এনবিআরকে দেওয়া বাজেট প্রস্তাবনায় বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন, এনবিআর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবে।কোথায় ব্যবহার হয় সিমলেস পাইপযে কোনো শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রথম গুরুত্ব দিতে হয় জান ও মালের নিরাপত্তার বিষয়টিতে। এ দুটি সম্পদ রক্ষায় ছোট-বড় সব ধরনের কারখানায় স্ট্রিম লাইন, গ্যাস লাইন, বয়লার লাইন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ফায়ার হাইড্রেন্ট, পাওয়ার প্লান্ট ও সোলার প্লান্ট স্থাপন করতে হয়। এসব প্লান্ট স্থাপনে মূল উপাদান পাইপ। শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত কিছু পাইপ উৎপাদন হয় দেশে। তবে সেগুলো ওয়েল্ডিং বা জোড়া লাগানো পাইপ। ফলে বয়লার, গ্যাস ও পানির উচ্চ চাপ নিতে এসব পাইপ সক্ষম নয়। সে জন্য জোড়াবিহীন বা সিমলেস পাইপের দরকার হয়। কিন্তু এ সিমলেস পাইপ দেশে উৎপাদন হয় না। অথচ দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। ফলে চাহিদার পুরোটাই আমদানি করতে হয়।ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার এসব পাইপ আমদানি করা হয়। এ ছাড়াও পাইপ ও ফিটিংস পণ্য যেমন ভাল্ব, এলবো, রেডিউসার, ফ্লান্স, ক্লাম, নাট-বোল্টজাতীয় পণ্যও আমদানি হয়। চার শতাধিক আমদানিকারক চীন, কোরিয়া, ভারত, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করেন। সব মিলিয়ে বছরে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার পাইপ ও ফিটিংস পণ্য আমদানি হয়।