
ইউক্রেন, গাজা এবং ইয়েমেন যুদ্ধের মধ্যে নতুন এক অর্থনৈতিক যুদ্ধের মুখোমুখি বিশ্ব। সামরিক যুদ্ধ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু অর্থনীতি নিয়েই শুরু হয়েছে বড় যুদ্ধ। কোনো বিশেষজ্ঞ এই যুদ্ধকে অর্থনীতিতে পরমাণু যুদ্ধ বলেও উল্লেখ করেছেন। কেবল পণ্য নয়, ওষুধের ওপরও শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে এর ভয়াবহতা নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক দিয়েই পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ অব্যাহত থাকায় তা পুরো বিশ্বকেই প্রভাবিত করছে। ওয়াশিংটনের পালটা ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশোধ হিসেবে চীন মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। চীন এই যুদ্ধকে ভয় পায় না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনকে মোকাবিলায় গোপন অস্ত্র ব্যবহারেরও হুমকি দিয়েছিলেন।
হঠাত্ করেই বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যে শুল্কের পরিমাণ বেড়ে ১২৫ নয়, ১৪৫ শতাংশ হয়েছে। এরপর চীনও মার্কিন পণ্যে শুল্ক ৮৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রকৃতি আরো স্পষ্ট হলো। চীন বলেছে, এরপর যুক্তরাষ্ট্র আবার পালটা শুল্ক দিলে তারা আর এতে সাড়া দেবে না। দেশটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা আরোপিত অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক এবং অর্থনৈতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন এবং সাধারণ জ্ঞানকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত শুল্ক অর্থনীতিতে বাস্তবিক কোনো তাত্পর্য ছাড়াই একটি সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, বারবার শুল্ক বৃদ্ধি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের গুন্ডামি এবং জবরদস্তিকে আরো উন্মোচিত করবে। এটি একটি রসিকতায় পরিণত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধ মোকাবিলায় ইউরোপকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
দুই পরাশক্তির যুদ্ধ বিশ্বকে যেভাবে প্রভাবিত করবে
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে ৫৮৫ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৭২ লাখ কোটি টাকা) বাণিজ্য হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে ৪৪০ বিলিয়ন ডলারের এবং চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল। ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ২৯৫ বিলিয়ন ডলার যা মার্কিন অর্থনীতির এক শতাংশের সমপরিমাণ। মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্র চীনে সয়াবিন, এয়ারক্রাফট অ্যান্ড ইঞ্জিন, ইনটেগ্রেটেড সার্কিটস, ফার্মাসিউটিক্যালস ও পেট্রোলিয়াম এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ব্যাটারি, খেলনা ও টেলিকম যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে। আইএমএফ এর তথ্যানুসারে, চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে দুই পরাশক্তির অবদান ৪৩ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, এই দুই দেশ যদি বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত থাকে তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি এর কঠোর প্রতিক্রিয়ার শিকার হবে। বৈশ্বিক বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ চীন বিশ্বের সর্বোচ্চ পণ্য উত্পাদনকারী দেশ। দেশটির নাগরিকরা এর সামান্য অংশই ভোগ করেন। জানা যায়, চীন ১ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য অতিরিক্ত উত্পাদন করে। এসব পণ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়। চীন কেবল নিজ দেশেই পণ্য রপ্তানি করে না, অন্যান্য দেশেও এর কারখানা রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি কমে গেলে উত্পাদন কমে যাওয়ায় শ্রমিক এবং শ্রমমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।