২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের রফতানি মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এটা কমানোর দাবি জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। পশাপাশি মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে বন্ধ হওয়া কারখানার এক্সিট প্ল্যান ও আলাদা বরাদ্দ রাখার দাবি সংগঠনটির। মঙ্গলবার (১৬ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক প্রতিক্রিয়ায় এসব দাবি করেছে রফতানিকারকদের সংগঠন- ইএবি। ইএবির আবদুস সালাম মুর্শেদী স্বাক্ষরিত প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, গত বছর রফতানি শিল্পের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উৎসে কর কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। শিল্পের এ কঠিন সময়ে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ হারে আরও পাঁচ বছর অব্যাহত রাখতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। বর্তমানে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প খাতসহ নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টসের করপোরেট করহার গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানা ছাড়া অন্যান্য কারখানার জন্য ১২ শতাংশ হারে বিদ্যমান রয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এ হার আগামী দুই বছরের জন্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণা প্রদানের জন্য শিল্পের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এ খাতের সঙ্গে চামড়া ও চামড়াজাত রফতানি শিল্পকেও একই নীতিমালার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রতি মাসে শূন্য হারে রিটার্ন দাখিলের বিধান রয়েছে। তাছাড়া রফতানির জন্য স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত বিভিন্ন আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির নগদে ক্রয়কৃত মূল্যের ওপর উৎসে কর বা ভ্যাট ধার্য করার বিধান থাকায় কারখানাগুলোর উৎপাদনে সময়ক্ষেপণ হয়ে থাকে, যা সময়মতো রফতানিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বাজেটে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় বাজেট পাস হওয়ার আগেই রফতানিমুখী সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শূন্য রিটার্ন দাখিলের বিধান রহিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রতিক্রিয়ায় সালাম মুর্শেদী আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা প্রদান অত্যন্ত সময়োপযোগী। বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি। এ পর্যায়ে থ্রি ডি স্যাম্পলিং, ফটোকপিংয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা জরুরি। ভার্চুয়াল মার্কেট প্লেসের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (বিটুসি প্ল্যাটফর্ম) মাধ্যমে আমরা পাশ্চাত্যে আমাদের নিজস্ব পোশাকের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। এতে ক্রেতাদের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতাও কমে যাবে। এ ব্যাপারে সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ হতে জারিকৃত প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে পণ্য খালাস করা হতো কিন্তু বর্তমান বাজেট প্রস্তাবে বিভাগীয় মূসক কর্মকর্তার দফতর হতে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে পণ্য খালাসের এসআরও করা হয়েছে, যা আমদানি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করবে এবং রফতানি ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা আগের পদ্ধতিতে অর্থাৎ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ হতে জারিকৃত প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে পণ্য খালাস করার জন্য সংশ্লিষ্ট এসআরও সংশোধনের প্রস্তাব করছি।
বর্তমানে রফতানি নগদ ভর্তুকির ওপর সংশ্লিষ্ট অর্ডিন্যান্সের অধীনে উৎসে কর চলমান ৫ শতাংশ হারে কর্তন করছে (এসআরও নং ০২-আইন আয়কর ২০২০ দ্রষ্টব্য)। বর্তমানে নগদ সহায়তার বিপরীতে যে ৫ শতাংশ আয়কর কর্তনের বিধান রয়েছে তা রহিত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবনায় এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় পূর্বের হার ১০ শতাংশ বলবৎ থাকবে। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী শিল্প খাতসমূহ যাতে এ ধাক্কা সামলে উঠতে পারে তার জন্য চলমান রফতানি নগদ ভর্তুকি ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন প্রস্তাবিত বাজেটে মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন ফায়ার সেফটি উপকরণ যেমন- ফায়ার ডোর, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ও পাম্প, ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি হারে শুল্ক সুবিধা পাওয়া গেলেও এর প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা না দিয়ে ৩০-৩৫% কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি শুল্ক ধার্য করা হচ্ছে। ফায়ার সেফটির সব ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা দেয়া উচিত।
অগ্নিনির্বাপক উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে রফতানি খাত ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের যৌথ প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে পণ্য খালাস করা হতো। কিন্তু বর্তমান বাজেট প্রস্তাবে রফতানি খাতের পাশাপাশি বিভাগীয় মূসক কর্মকর্তার দফতর হতে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে পণ্য খালাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এসআরও সংশোধন করে পূর্বের ন্যায় শুধু বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ থেকে প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে পণ্য খালাস করা যুক্তিযুক্ত হবে।
সংগঠনটি বলছে, মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং জনজীবন বিপর্যস্ত, এমন চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে আগামী এক বছরে বন্ধ হয়ে যাবে বহু শিল্পকারখানা, হারিয়ে যাবে অনেক উদ্যোক্তা। তাদের নিরাপদ প্রস্থানের দিকনির্দেশনা ও আগামী বাজেটে আলাদা বরাদ্দের দাবি করছি।
এই কঠিন দুঃসময়ে সময়োপযোগী, জনকল্যাণমুখী, ব্যবসাবান্ধব ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে প্রস্তাবিত এ বাজেট উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল হয়ে উঠবে এবং স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি সরকারের ব্যবসাবান্ধব কর্মপন্থা এবং রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।