আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় দেশে রডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় বিক্রয়মূল্য বাড়েনি বলে জানান দেশের ইস্পাত ব্যবসায়ীরা। এ জন্য লোকসান থেকে বাঁচতে কাঁচামাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ও কর কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নির্মাণ খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা নিয়ে গত বুধবার বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইস্পাত ও নির্মাণ খাতের দুই সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) নেতারা। সেখানেই এসব দাবির কথা জানান তাঁরা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এফবিসিসিআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সভাপতি মানোয়ার হোসেন বলেন, গত দুই বছরে স্টিল তৈরির কাঁচামালের দাম এবং পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে রডের উৎপাদন খরচ বাড়লেও সে তুলনায় বিক্রয়মূল্য বাড়েনি। তিনি জানান, বর্তমানে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ কিনতে ৭৯ শতাংশ বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাতে সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫২ শতাংশ। তার বিপরীতে বিক্রয়মূল্য বেড়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই লোকসান দিয়ে রড বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি মেট্রিক টন রড বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার টাকায়, যেখানে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এই রড বিক্রি হচ্ছে ৮৬ হাজার টাকায়। এমন অবস্থায় ক্ষতি পোষাতে স্ক্র্যাপ ও স্পঞ্জ আয়রন আমদানিতে বিদ্যমান সব শুল্ক ও কর কমানোর দাবি জানান তিনি।
বৈঠকে নির্মাণ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি শফিকুল হক বলেন, রডের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের নির্মাণ খাতেও। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
এ সময় নিয়মে থাকলেও সরকারি প্রকল্পের চুক্তিতে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানান শফিকুল হক। তিনি বলেন, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত বিধিমালা ও পরিপত্রে সরকারি প্রকল্পগুলোতে মূল্য সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত বেশির ভাগ প্রকল্পের চুক্তিতে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি রাখা হয়নি। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য সরকারি প্রকল্পের চুক্তিমূল্য বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে নির্মাণ খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও ইস্পাত উৎপাদকেরা তিন মাস পরপর পর্যালোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন পারস্পরিক সহযোগিতা ও আলোচনার মাধ্যমে নির্মাণ খাতের সমস্যা নিরসনের তাগিদ দেন।