বাড়বে ভ্যাট, বাড়তি দামের চাপে ভুগতে হবে ভোক্তাদের। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ দাম বাড়াচ্ছে পাইপেরমেট্রোরেলের ভাড়ায় বসছে ১৫% ভ্যাটকৃষি ও নিত্যপণ্যে শুল্ক না বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকরছাড় কমাতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
No icon

ধনীদের সম্পদে বেশি করারোপের প্রস্তাব অর্থনীতিবিদদের

সম্পদশালীদের ওপর বেশি করে করারোপের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বর্তমান সারচার্জ পদ্ধতির পরিবর্তে প্রতি তিন বছর অন্তর সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করে তার ওপর করারোপের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে করের পরিধি বাড়িয়ে সাধারণের ওপর আরোপিত পরোক্ষ কর কমিয়ে আনা এবং কালো টাকা নিয়ন্ত্রণে বাজেটে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি উইথহোল্ডিং কর প্রত্যাহারের সুপারিশও এসেছে তাদের কাছ থেকে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেন অর্থনীতিবিদরা। এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্সের (পিডব্লিউসি) প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত বলেন, শুল্ক ও ভ্যাট হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে সরকারকে। অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতার পদক্ষেপ নিতে হবে। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ করনেট বাড়াতে হবে। ধনীদের সম্পদের ওপর কর বাড়াতে হবে। ধনীদের প্রকৃত সম্পদ নির্ধারণে প্রতি তিন বছর অন্তর পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

কালো টাকা উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আবুল বারকাত বলেন, বর্তমানে দেশে ৭ লাখ কোটির বেশি কালো টাকা আছে, যা দুই অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সমান। অর্থাৎ এ টাকা দিয়ে সরকার দুটি অর্থবছরের বাজেট পরিচালনা করতে পারবে। সব কালো টাকা উদ্ধার করে একসঙ্গে অর্থনীতির মূলস্রোতে আনা সম্ভব নয়। তবে কীভাবে অর্থনীতিতে আনা যায় বাজেটে তার একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার। আসছে বাজেটে অন্তত ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা যাতে উদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। প্রতি বছর ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, তা রোধ করারও সুস্পষ্ট উদ্যোগ বাজেটে রাখা দরকার।

অনুষ্ঠানে পিডব্লিউসির ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশিদ বলেন, কনসালট্যান্সি ফার্মসহ বড় বড় প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা করপোরেট করের পাশাপাশি উইথহোল্ডিং ট্যাক্সের কারণে আগ্রহ হারাচ্ছে। বিনিয়োগ উৎসাহে বিষয়টি ভাবা উচিত। টোব্যাকো ও নিম্নস্তরের সিগারেটের ওপর কর তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি না করায় বাজার সয়লাব হয়ে গেছে, চোরাচালান বেড়ে গেছে। এ খাতে দাম বাড়ালে কর আদায় বাড়বে।

সংগঠনটির পার্টনার সুস্মিতা বসু বলেন, বিদেশী বিনিয়োগের কর কাঠামো ঠিক করে দেয়া হলে বিনিয়োগ বাড়বে। অনলাইন বিজ্ঞাপন (ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, অ্যামাজন) ট্যাক্স বিষয়ে গাইডলাইন হলে ট্যাক্স আসবে। অন্য দেশ কীভাবে এ খাত থেকে ট্যাক্স আদায় করে তা আমরা জানি, এনবিআর সহযোগিতা চাইলে আমরা দেব। বিদেশী কর্মীরা কর দিতে চায়। কিন্তু ই-টিআইএন নিতে পারে না। তাদের ই-টিআইএন দিলে এনবিআর ট্যাক্স আদায় করতে পারবে।

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এনবিআর বলছে এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব হবে। সিপিডিও মনে করে বাজেটটা যাতে ব্যবসায়ীবান্ধব না হয়। কারণ ব্যবসা ও ব্যবসায়ীবান্ধব এক কথা নয়। ব্যবসাবান্ধব বাজেট হলে শুধু ব্যবসায়ী নয়, চাকরিজীবী এবং সাধারণ মানুষ এটার ফল ভোগ করতে পারবেন। ব্যবসায়ীবান্ধব হলে কিছুসংখ্যক পুঁজি নিয়ন্ত্রণকারীর পকেট ভারী হবে। ধীরে ধীরে বৈষম্য আরো বাড়বে। জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ভ্যাট আইনে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে, তা এখনো পরিষ্কার নয় উল্লেখ করে বাজেটের আগেই এর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশে প্রায় ৪০ লাখ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিয়েছেন। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেন প্রায় ১৮ লাখ। ই-টিআইএন নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে করযোগ্য থাকলেও রিটার্ন দাখিল করেন না। এদের এনবিআর কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারে না। ফলে বিপুলসংখ্যক করযোগ্য ব্যক্তি বছরের পর পর কর আওতার বাইরে থেকে যায়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে রিটার্ন দাখিল না করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত এবং জরিমানা আরোপের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে।

নতুন ভ্যাট আইনসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাবনার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাচ্ছি ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু হোক। এরপর সব পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে কোথাও সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেটা করা যাবে। আগামীতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ব্যাপারে এনবিআর কঠোর হবে। আমরা গত বছর বলেছি, ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের বিজ্ঞাপনে কর বসাব। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারিনি। আমাদের যে জনবল, সক্ষমতা তাতে আমরা কর আদায় করতে পারব না। আমরা আউটসোর্সিং করলে এ খাত থেকে ভালো ফল পেতাম, আমরা আউটসোর্সিং করব।