রাজস্ব আয় বাড়াতে বিভিন্ন খাতে করছাড় ও অব্যাহতি কমিয়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে করছাড় অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এনবিআরের প্রস্তুতির এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এমন মত দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে নতুন করে আর কোনো খাতকে কর অব্যাহতি না দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে যেসব খাতে কর অবকাশ দেওয়া হয়েছে, মেয়াদ শেষে তা আর না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবেও সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অসুস্থ থাকায় বৈঠকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিফা আয়শা খান, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। ঋণ কর্মসূচির আওতায় করছাড় কমানোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে বিদ্যমান সব ধরনের করছাড় বাতিল করতে হবে। এনবিআর মনে করে, কর-জিডিপি অনুপাত বেশির ভাগ দেশের তুলনায় কম হওয়ার বিশেষ কারণ করছাড় ও কর অবকাশ সুবিধা। গত নভেম্বরে প্রকাশিত এনবিআরের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ করব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রক্ষেপিত জিডিপি আকার বিবেচনায় নিলে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ করব্যয় বলতে রেয়াত, ছাড়, অব্যাহতি, হ্রাসকৃত হারে করারোপ এবং মোট করযোগ্য আয় পরিগণনা থেকে আয় বাদ দেওয়াকে বোঝায়।
কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করতে এবং কর সংগ্রহ বাড়াতে আাগামী বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে এনবিআর। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ থেকে আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়াচ্ছে না এনবিআর। সংস্থাটির এসব কর্মকৌশলে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।এনবিআরকে আগামী বাজেটে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে যা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে সরকারের ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার কর রাজস্ব আদায় করতে হবে। কর রাজস্বের প্রায় পুরোটাই আদায় করে এনবিআর।