শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীনঅনলাইনে ২০ হাজার আয়কর রিটার্ন দাখিলভ্যাট অডিট প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকরদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা যাবে নাযাদের আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক
No icon

ট্যাক্সের নামে মেয়র তাপসকে ৫০ লাখ টাকা দেন অধ্যক্ষ

নিজের অবস্থান ধরে রাখতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে & ট্যাক্স বাবদ ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ডক্টর মালিকা কলেজের অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন মিঞা। এজন্য প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পৌর কর নামে অবৈধভাবে ১ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। আরও নানা রকম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর বিরুদ্ধে।কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ, অন্য কোনো কলেজ কর্তৃপক্ষ তাপসকে করের নামে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেনি। অধ্যক্ষ শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা বা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যথেষ্ট দরকষাকষি না করেই গত বছরের জানুয়ারি মাসে কলেজ তহিবল থেকে এই টাকা দিয়েছেন।নাম না প্রকাশের শর্তে কলেজের একজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, মেয়র তাপসকে অধ্যক্ষ ৫০ লাখ টাকা নগদে দিয়েছিলেন। তবে ঠিক কী উদ্দেশ্যে টাকা দিয়েছিলেন, তার কাগজপত্র কখনও দেখাননি।জালালউদ্দিনের এসব দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজে অন্তত ২৫ শিক্ষক।

কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, পৌর কর নামে তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছেন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন। তিনি জানান, মেয়র তাপসকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী, এ খাতে কোনো ধরনের টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। তবে পরবর্তী সময়ে কিছু শিক্ষার্থীকে টাকা ফেরত দিলেও তহবিল না থাকার অজুহাত দেখিয়ে বাকিদের টাকা ফেরত দেননি তিনি।এ বিষয়ে অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন বলেন, আমাদের একটি নতুন ভবন হয়েছে। এতে কোটি টাকা ট্যাক্স আসে। সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করতে বলা হয়। এসেসমেন্টের ভিত্তিতেই এই টাকা দেওয়া হয়েছে। এই টাকা ছাত্রদের থেকে নেওয়া হয়েছে।জালালউদ্দিন ২০১৭ সালে মালিকা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ঢাকা জেলার উত্তরখান থানায় অবস্থিত কাঁচকুড়া কলেজে ছিলেন। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে সেখান থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সমকালের হাতে এসেছে।শিক্ষকদের অভিযোগ, কলেজের পর্যাপ্ত তহবিল থাকা সত্ত্বেও নন-এমপিও শিক্ষকদের স্কেল অনুযায়ী ন্যায্য বেতন না দিয়ে তাদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করেছেন অধ্যক্ষ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দায় এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে শুধু বেসিক স্কেল প্রদান করেছেন।

তারা বলেন, কলেজে অনুষ্ঠিত সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, ডিগ্রিসহ কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের খুব সামান্য সম্মানী প্রদান করে নিজে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ। পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছেন তিনি।অভিযোগ রয়েছে, তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের সামনে অশালীন ব্যবহার এবং অশ্লীল ও ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করেন। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত দু জন শিক্ষককে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে চাকরিতে বহাল রেখেছেন তিনি। তিনি কথায় কথায় শিক্ষকদের শোকজ করেন। শিক্ষকদের সময়মতো পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করেন। একজন সহযোগী অধ্যাপককে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের পরীক্ষা কমিটিসহ সব ধরনের কমিটি তিনি দীর্ঘদিন ধরে পুনর্গঠন করছেন না। যদিও এসব কমিটি প্রতিবছর পুনর্গঠন করার কথা। তবে এ বিষয়ে জালালউদ্দিনের দাবি, প্রতিবছর কমিটি পুনর্গঠনের নিয়ম নেই। তবে অন্য শিক্ষকরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর এসব কমিটি পুনর্গঠন করতে হয়। কিন্তু তিনি এসব কমিটি নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে চালাচ্ছেন।শিক্ষকদের বেতনবৈষম্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, গভর্নিং বডির সাবেক চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার আগে আমি সব শিক্ষককে স্কেলে দিতে অনুরোধ করি। আমি কোনো শিক্ষককে আলাদা করে দেখিনি। এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেতন স্কেল কাউকে ১০ শতাংশ, কাউকে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।তিনি বলেন, আমার চোখে সবাই সমান। কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি।এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আবদুল হাই জিন্নাহ বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।