ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, চুলপড়া চিকিৎসায় চীনারা ২০২০ সালে ২৮৪ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এ বাজার আরও ৬ থেকে ৭ গুণ বড় হবে।
২০১৯-২০ আর্থিক বছরে চুল রপ্তানি করে এ খাতে দেশের আয় বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ! আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৩৫ কোটি রুপির বেশি। অর্থাৎ চুল কাটার পর ফেলে না দিয়ে গুছিয়ে রেখে তা আবার বিক্রি করে হয়তো নতুন রোজগারের পথও পাওয়া যেতে পারে, ঠিক যেভাবে পুরোনো খবরের কাগজ বিক্রি করা হয়।
মহামারির বছরে ভারতের অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে। প্রায় সব সূচকেই নিচে নেমে গেছ দেশটি। তবে একটি ভালো খবর হলো, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চুল রপ্তানিতে ভারত অনেকটা প্রবৃদ্ধি করতে পেরেছে। আর সেই চুলের বড় একটি অংশ যাচ্ছে চীনে।
তথ্য বলছে, রপ্তানির পরিমাণ ওজনের হিসাবে মাত্র ৩৯ শতাংশ বাড়লেও, কোভিডের কারণে বিশ্ববাজারে চুলের জোগান কমায় বাজারে দাম অনেকটাই বেড়েছে। আর তারই লাভ তুলেছে ভারত। আর মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশ ভারতের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি চুল কেনে, সেগুলোর শীর্ষে আছে চীন। চীন সারা বিশ্ব থেকে যত চুল আমদানি করে, তার ৬০ শতাংশ যায় ভারত থেকে।
ভারতে চুল সরবরাহের অন্যতম কেন্দ্র হলো দেশটির মন্দিরগুলো। অন্ধ্র প্রদেশের ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির চুল সরবরাহে শীর্ষস্থানের দাবিদার। আর মেয়েদের চুলের দাম ছেলেদের চুলের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তবে কাটা চুলের চেয়েও বেশি দাম হলো রেমি চুলের। মাথা থেকে সরাসরি তুলে নেওয়া চুলকে রেমি চুল বলা হয়। এ চুলকে প্রক্রিয়াকরণের পরে তা দিয়ে যখন উইগ বা পরচুলা বানানো হয়, তা নাকি নকল বলে চেনাই যায় না। মজার কথা হলো, ভারত নিজে চুল প্রক্রিয়াকরণ করে পরচুলা বানায় না। দেশটি কাঁচা চুল প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ করে রপ্তানি করে থাকে।
বাজার বিশ্লেষণে জানা যায়, চীনের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ চুল পড়া সমস্যায় ভুগছে। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ তরুণ। তরুণেরা সারা জীবন টাকমাথা বয়ে বেড়াতে চান না। সে জন্য দেশটিতে চুলের যত্নজনিত সামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে। গ্লোবাল টাইমস এর তথ্যানুসারে, চুল পড়া চিকিৎসায় চীনারা ২০২০ সালে ২৮৪ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এ বাজার আরও ছয় থেকে সাত গুণ বড় হবে।
চীনের বেইজিং শহরে পরচুলার দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই আছে, বিশেষ করে সেখানে তরুণীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। গত দুই বছরে পরচুলার চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। এক পরচুলার দোকানের মালিক গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, গত দুই বছরে অন ও অফলাইনে পরচুলার চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। আগে দেশটিতে মধ্যবয়স্ক টাকমাথার মানুষ পরচুলার মূল ক্রেতা ছিল। এখন সেখানে তরুণের সংখ্যা বেড়েছে। এমনকি মিলেনিয়াল বা ২০০০ সালের পর জন্মগ্রহণ করা তরুণেরাও পরচুলা কিনতে ভিড় করছেন বেইজিংয়ের পরচুলার দোকানগুলোতে।
তবে চুলের এ বাজার এখন আর নিছক পরচুলার মধ্যে সীমিত নেই। চুল লাগানো, সোজা করা, বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট এসবও এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফ্রস্ট অ্যান্ড সালিভানের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালে চীনে চুল লাগানো বা ট্রান্সপ্লান্টেশনের বাজারমূল্য ছিল ২০৭ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণের। এই বাজারের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বছরে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। পরচুলার মতো এই ট্রান্সপ্লান্টেশনেও চুল লাগে। আর সেই চুলের বড় একটি অংশ যাচ্ছে ভারত থেকে।