যখনই শেয়ার কেনা থাকুক না কেন, এখন থেকে কোনো বিনিয়োগকারী ওই শেয়ার বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা পেলে তাঁকে ১৫ শতাংশ হারে সরকারকে কর দিতে হবে। বিনিয়োগকারী সম্পদশালী হলে তাঁকে প্রদত্ত করের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ দিতে হবে। গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এবিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টদের দাবির মুখে এনবিআর বিদ্যমান কর আইনের সংশোধন করে এমন করহার নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছে। এতে শেয়ারবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির সম্পদশালী বড় বিনিয়োগকারীদের করভার প্রায় অর্ধেকে নামবে। কারণ বিদ্যমান আইনে ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ। এনবিআর আশা করছে, কর কমানোয় দেশি-বিদেশি বড় বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।গতকাল লেনদেনের মাঝে এনবিআরের পক্ষ থেকে এ বিজ্ঞপ্তি প্রচার হলে শেয়ারবাজার লেনদেনের শেষ দেড় ঘণ্টায় এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। এর আগে সকাল ১০টায় দিনের লেনদেনের শুরু থেকে প্রথম তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ধুঁকছিল শেয়ারবাজার। দুপুর ১২টায় বেশির ভাগ শেয়ার দর হারালে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭০ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমেছিল। এ সময় ১৯৩ শেয়ারের দর হারানোর বিপরীতে ১৪০টির দর বেড়ে কেনাবেচা হয়।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ঘুরে দাঁড়াতে থাকে শেয়ারদর ও সূচক। বিশেষত লেনদেনের শেষ দেড় ঘণ্টায় শেয়ারদর ক্রমাগত বেড়েছে। দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে স্বাভাবিক লেনদেন শেষ হওয়ার মুহূর্তে সূচকটি দিনের সর্বনিম্ন অবস্থানের তুলনায় ১০৩ পয়েন্ট বা রোববারের তুলনায় ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫২৭৪ পয়েন্ট ছুঁইছুঁই অবস্থানে উঠেছিল। পরে শেয়ারদরের সমাপনী মূল্যের হিসাবে সূচকটি ৬১ পয়েন্ট বেড়ে ৫২৫২ পয়েন্টে থামে।লেনদেন শেষের তথ্যানুযায়ী, ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৫৭টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৪টির। লেনদেনের পুরো সময়ে ৫৬৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টায় যেখানে ৩০৯ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল, সেখানে লেনদেনের শেষ দেড় ঘণ্টায় কেনাবেচা হয় ২৫৬ কোটি টাকার শেয়ার।প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জাতীয় বাজেটে প্রথমবারের মতো মূলধনি মুনাফায় ব্যক্তির মূলধনি মুনাফা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রেখে এর ওপর যে কোনো অঙ্কের মূলধনি মুনাফায় কর আরোপ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোট আয়ের সঙ্গে যোগ করে প্রযোজ্য হারে কর দেওয়ার বিধান করা হয়েছিল। শুধু কেনার পাঁচ বছর পর শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে কর দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়।সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাপক দর পতনের প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা মূলধনি মুনাফায় কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে সরকারকে এ বিষয়ে বোঝাতে অনুরোধ জানান তারা। এমনকি ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে স্টক এক্সচেঞ্জটির পরিচালনা পর্ষদের এক প্রতিনিধি দল এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ কর প্রত্যাহার বা যৌক্তিক হারে নামানোর অনুরোধ করেন। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।এদিকে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দর পতনের ঘটনায় সরকারও উদ্বিগ্ন ছিল। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেই গত ৩০ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিজে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করেন। এর এক সপ্তাহের মধ্যে এনবিআর করহার বিষয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।এনবিআর জানিয়েছে, শেয়ার কেনা ও বেচার সময়কাল তুলে নিয়ে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফায় কর ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়ায় ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়কালে শেয়ার লেনদেন থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয়ের পরিমাণ নির্বিশেষে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এ ছাড়া করদাতার নিট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকার বেশি হলে মূলধনি মুনাফার ওপর প্রযোজ্য করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। মোট সম্পদ ১০ কোটি টাকার বেশি হলে সারচার্জ হবে ২০ শতাংশ এবং মোট সম্পদ ২০ কোটি টাকার বেশি হলে ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে ৩৫ শতাংশ হারে সারসার্জ দিতে হবে।