আল্ট্রালাইজেশন পারমিশন (ইউপি) ইস্যুতে কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিবিএমএস) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।রোববার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওয়ে রাজস্ব বোর্ড ভবনে মিট দ্য বিজনেস অনুষ্ঠানে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানা যখন বন্ডেড ওয়্যার হাউজের কাঁচামাল ব্যবহার করে তখন কাস্টমস থেকে ইউপি নিতে হয়। দেশের বন্ড ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে গত জানুয়ারি থেকে এনবিআর সিবিএমএস (কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) নামে একটি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার চালু করেছে। বর্তমানে এনবিআরের অধীনস্থ তিনটি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে এই সফটয়্যারের ২৪টি মডিউল ব্যবহার করে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনে সেবা দেওয়া হচ্ছে।এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদুল হাসান খানসহ শীর্ষ ব্যবসায়ী ও এনবিআর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিবিএমএস) বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। আমরা একটা সার্কুলার জারি করবো, এখন থেকে আর কাগজে কোনো কাজ নেবো না। আমরা শতভাগ অটোমেটেড করবো। যত দ্রুত সম্ভব করবো। ১ ডিসেম্বর থেকে এটি বাধ্যতামূলক করবো।যদি কোনো সমস্যা থাকে, বড়জোর এক সপ্তাহ সময় নেবো। সিবিএমএস বাধ্যতামূলক করবো। তার আগে রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের (এআরও) প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে - যোগ করেন তিনি।অদক্ষতা প্রমাণ হলে আরও এবং এআরওদের চাকরিচ্যুত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় ফেল করলে অদক্ষতা বিবেচনা করে চাকরিচ্যুত করা হবে। কোনো ছাড় নেই।বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বন্ডের অপব্যবহার যারা করে তারা সমস্যায় পড়ে না। যারা করে তাদের সময়োচিত শাস্তি দেন, প্রয়োজনে তাদের ছবি পত্রিকায় দিতে পারেন। আমরা বন্ড অপব্যবহারকারীদের দেখতে চাই, তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন। তাদের কারণে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরকারকে পণ্য আমদানিতে এইচএস কোড তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বন্ড লাইসেন্সের আওতায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এইচএস কোড তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করতে পারেন। যত সমস্যা হয় ওই এইচএস কোডের কারণে। বছর শেষে আমরা পাই টু পাই হিসাব দিচ্ছি। তাহলে এইচএস কোডের ঝামেলা কেন পোহাবো। এইচএস কোডের ভুলের কারণে আবার মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগও ওঠে। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত।অনুষ্ঠানে বন্ডের অপব্যবহাকারীদের তালিকা চান বাংলাদেশ বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, আমাদের সুনির্দিষ্ট করে বলবেন, আমাদের কোন কোন সদস্য বন্ডের অপব্যবহার করে। আমাদের কোনো সদস্য যদি বন্ডের অপব্যবহার করে আমরা তাদের সেবা বন্ধ করে দেবো। আমরা আমাদের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে ইন্ডিকেশন দিয়ে বলেছি, এসব করবেন না। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য পুরো শিল্প দায়ী হবে, সেটি আমরা গ্রহণ করবো না।এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানির জন্য শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের অনুমোদিত সহগ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে ইউপি গ্রহণ করে থাকে। সিবিএমএস-এর ইউপি মডিউল চালু হলেও এখনো বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ইউপি নিচ্ছে। অনলাইনে এ সেবা নিচ্ছে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান।বাধ্যতামূলক না হওয়ায় গত ১০ মাসেও সফটওয়্যারটির ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। সিস্টেমটি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে সিস্টেমটিতে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সংশোধন করে আরও ব্যবহারবান্ধব করা হয়েছে।

