করদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা যাবে নাযাদের আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্য সাড়ে ৫৭ বিলিয়ন ডলার এস আলমের লাখ কোটি টাকা ঋণ, ব্যাংকে জমা ২৬ হাজার কোটিব্যবসায়ীদের ভ্যাট অডিটের নামে হয়রানির দিন শেষ
No icon

শেয়ারবাজারে ১১ কোম্পানির অনিয়ম তদন্তে কমিটি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ১১ কোম্পানির ১২টি অনিয়ম খতিয়ে দেখে দোষী ও তাদের দায় শনাক্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রোববার কমিশনের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি। ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে অনিয়ম নিয়ে প্রয়াত ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের পর এটাই এ ধরনের প্রথম বিশেষ তদন্ত কমিটি। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকদের দাবি, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সব অনিয়মের তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। 

নবগঠিত বিএসইসির বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদকে। তিনি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কার্যক্রমরত সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ভিআইপিবির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– দেশের প্রথম বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এইমস বাংলাদেশের সাবেক এমডি ইয়াওয়ার সাইদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য  শফিকুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার জিশাস হায়দার এবং বিএসইসি নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটিকে সুনির্দিষ্টভাবে ১২টি সম্ভাব্য অনিয়মের বিষয়ে খতিয়ে দেখে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এ কমিটি চাইলে আরও সদস্য নিতে পারবে।
কমিটিকে যেসব অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে বলা হয়েছে– তার শুরুতেই আছে বেক্সিমকো গ্রুপভুক্ত কোম্পানির বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা ইস্যুর মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং আইএফআইসি গ্রান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে দেড় হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ-সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
এ ছাড়া দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেডের অনুমোদন প্রক্রিয়া, শেয়ার বরাদ্দ করা এবং মূল্য নির্ধারণ অনুসন্ধান ও তদন্ত করা।

এর বাইরে রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল লা মেরিডিয়েনের মালিকানায় থাকা বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিও। এ আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আর্থিক খাতে বিভিন্ন জালিয়াতির হোতা নাফিজ সরাফাতের ব্যক্তিগত বেআইনি তৎপরতা ছিল। তালিকাচ্যুত আল-আমীন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির মালিকানা বদলের ক্ষেত্রে শেয়ার হস্তান্তর এবং স্বল্প মূলধনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রচেষ্টা-সংক্রান্ত অনিয়মের ক্ষেত্রে বিএসইসির শর্তারোপসহ যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। এ ঘটনায় আলোচিত শেয়ার কারসাজির হোতা সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরো এবং বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
তদন্ত কমিটিকে সোনালি পেপার নামে পুনঃতালিকাভুক্ত করা ছাড়াও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বার্ষিক লভ্যাংশ বিতরণে অনিয়ম এবং কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়াতে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল, তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত, তাঁর বন্ধু জাবেদ এ মতিন, আবুল খায়ের হিরোসহ বহু ব্যক্তির সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে।

কমিটি ফরচুন শুজ, ঢাকা ইপিজেডের রিং শাইন টেক্সটাইল, এক্‌মি পেস্টিসাইডস, কপারটেক নামক কোম্পানির আইপিও অনুমোদন থেকে শুরু করে শেয়ার কারসাজি, অর্থ পাচার বিষয়ে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দায় খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির মালিকানা বদল-সংক্রান্ত অনিয়ম ও শেয়ার কারসাজি এবং কোয়েস্ট বিডিসি (পূর্বনাম পদ্মা প্রিন্টার্স)  কোম্পানির পুনঃতালিকাভুক্তির চেষ্টায় সব অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়েও অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ আছে, ফরচুন শুজের আইপিও অনুমোদন ও কারসাজিতে  বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমান, ঢাকা ইপিজেডের রিং শাইন টেক্সটাইলের আইপিও কারসাজির হোতা ব্যবসায়িক গ্রুপ ফারের চেয়ারম্যান ও এমডি আব্দুল কাদের ফারুক এবং কপারটেকের আইপিও অনুমোদনে মূল হোতা নাফিজ সরাফাত। এমারেল্ড অয়েলের কারসাজিতে জাপানপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিয়া মামুন এবং কোয়েস্ট বিডিসির অনিয়মে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির সিইও রিয়াজ ইসলামের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে।
শত শত আইপিও অনিয়ম এবং শেয়ার কারসাজির মধ্যে বিএসইসি মাত্র ১২টি অনিয়ম নিয়ে কেন তদন্ত কমিটি করেছে– এমন প্রশ্নে সংস্থাটির শীর্ষ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কমিশনের ইচ্ছা সব অনিয়মের তদন্ত করা। প্রতিটি ঘটনার সুচারু তদন্ত সম্পন্ন করতে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, যাতে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়। রোববার যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তা প্রথম পদক্ষেপ মাত্র।

ডিএসইতে সাত স্বতন্ত্র পরিচালক
এদিকে ডিএসইর সাবেক এমডি মাজেদুর রহমানকে চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বিএসইসি। গতকালের কমিশন সভায় তাঁকেসহ আরও ছয়জনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সংস্থাটি।

অপর ছয় স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন–  আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালক অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব.) ডক্টর মো. কামরুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ হোসেন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মফিজুল ইসলাম রাশেদ, সিরডাপের গবেষণা পরিচালক ড. মো. হেলালউদ্দিন, বহুজাতিক বীমা কোম্পানি মেটলাইফের সাবেক জিএম সৈয়দ হাম্মাদুল করীম এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সাইট লিমিটেডের এমডি ইসহাক মিয়া।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মো. হাসান বাবুসহ সব স্বতন্ত্র পরিচালকরা পদত্যাগ করলে পদগুলো শূন্য ছিল। গতকাল রাতে পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিএসইসি জানিয়েছে, ডিএসইর নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চেয়ারম্যানসহ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।