সারাদেশে করযোগ্য আয় ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) আছে এমন করদাতা খুঁজে বের করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এজন্য আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) নিয়োগ করবে সংস্থাটি। এরই মধ্যে টিআরপি বিধিমালাও জারি করা হয়েছে। আর টিআরপি বিধিমালাকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে তা বাতিলে আন্দোলন করে আসছেন আয়কর আইনজীবীরা।সবকিছু উপেক্ষা করে সম্প্রতি টিআরপি সহায়িকা প্রকাশ করেছে এনবিআর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিআরপির মাধ্যমে বাড়বে অনিয়ম। তবে এনবিআর তার নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কর আদায় করতে পারে।নতুন ধারণা হওয়ায় টিআরপি নিয়ে ভীতি কাজ করছে। তবে দেশের করজাল বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন টিআরপিরা। দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা সাড়ে ৯৩ লাখ অথচ রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ২৫ লাখ মানুষ। দেশের মানুষের আয় ও সম্পদ বাড়লেও অজ্ঞতার কারণে সিংহভাগ মানুষই নেই আয়করের আওতায়। দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ট্যাক্স রেশিও সাড়ে ৯ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, উন্নত দেশে বেসরকারিভাবে আয়কর সংগ্রহকারী সংস্থা আছে। আমাদের এখানে রিটার্ন প্রস্তুতকারী যারা হবেন, তারা আসলে আয়কর প্রদানকারীকে সহায়তা করবেন। বিধিতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য উল্লেখ আছে। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আয়কর সংগ্রহ করা সহজ হবে।তিনি বলেন, বিষয়টা নতুন, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ভুল ধারণা থাকতে পারে। তবে কর আদায় বাড়াতেই এ কৌশল নেওয়া হয়েছে। যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা না বুঝেই করছেন। সহায়িকা দেখলে স্পষ্ট ধারণা পাবেন তারা।এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কেন কম হচ্ছে, কোথায় লিকেজ হচ্ছে- এটার ওপর স্ট্যাডি প্রয়োজন। জাতীয় সংসদ থেকে এটা আলোচনা হওয়া দরকার। আমাদের জিডিপি বাড়ছে, কিন্তু আদায় হচ্ছে না। পরীক্ষামূলকভাবে কর এজেন্ট নিয়োগ করা উচিত। এ উদ্যোগ করদাতাদের সচেতন করবে।
কর আইনজীবীরা বলেছেন, এর আগেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের দিয়ে আয়কর সংগ্রহ করা হয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। আরটিপিও বাস্তবায়ন হবে না। ১ থেকে ২ বছর পর এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা এর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই।জানতে চাইলে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তৌহিদ উজ্জামান খান বলেন, এখানে অনিয়ম হবে এটা নিশ্চিত। এনবিআর থার্ড পার্টি (টিআরপি) নিয়োগ দেবে। এ থার্ড পার্টির লোকজন নিজেদের এনবিআরের সদস্য দাবি করে করদাতাকে ভয়ভীতি দেখাবেন। করদাতার তথ্য সংগ্রহ করে যখন এনবিআরে জমা দেবে তখন তারা নিজেদের আয়কর আইনজীবী পরিচয় দেবেন। এর মাধ্যমে একটা দালাল প্রথা চালু হবে।