অনলাইনে ৯৬ ঘণ্টা ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ থাকবেরমজানে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে কর অব্যাহতিখোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের শুল্ক বাকি ১৮ হাজার কোটি টাকা, ৩৭ চিঠি দিয়েও ব্যর্থ এনবিআরভ্যাটের একক রেট করতে পারলে ফাঁকি কমে যাবেজুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনায় জাতীয় ভ্যাট দিবস উদযাপন
No icon

নতুন ভ্যাট আইনে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে এনবিআর

আগামী ১ জুলাই থেকে আইনটি বাস্তবায়ন করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেয়া হবে, আবার অনেক ক্ষেত্রে সংযোজন করা হবে নতুন বিধান। এতে কিছু খাতে ভ্যাটের চাপ বাড়বে। পাশাপাশি চাপ কমবে অনেক খাতে। যেমন টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বাড়ানো হচ্ছে, এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হলেও এর সঙ্গে ট্যাক্স হার বাড়ানো হচ্ছে। আবার ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বাড়ানো হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে পেট্রোলিয়াম ও ওষুধের জন্য বিশেষ স্কিম করা হচ্ছে। আইনের এসব পরিবর্তন আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আনা হবে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ৩১ জানুয়ারি এনইসি ভবনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। সেখানে এনবিআরের পক্ষ থেকে নতুন ভ্যাট আইনের বেশকিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এর মধ্যে টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বৃদ্ধি, ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বাড়ানো উল্লেখযোগ্য।

দুই বছর আগে থেকেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, আগামী বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। ফলে এবার ভ্যাটের আওতা বাড়বে। একই সঙ্গে এর হারও হবে ভিন্ন ভিন্ন। এছাড়া ভ্যাট ফাঁকি রোধে অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভ্যাট প্রদান করেন ভোক্তা। সরকারের পক্ষে ভোক্তার কাছ থেকে এটি আদায় করে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাট সরকারের হিসাবে নেয়াটা বেশ জটিল। এটি সহজ করতে পারলেই ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন সহজ হবে।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের একটি কাঠামো করা হলেও সব ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। থোক ভিত্তিক ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা বহাল থাকছে অনেক খাতে। এতে সরকারকে দেয়া জনগণের ভ্যাটের টাকা সরকার সব পাবে না। ভোক্তারা যে ভ্যাট দেয় তার পুরোটাই যাতে সরকার পায় সে ব্যবস্থা করা উচিত।

সূত্র জানায়, এবার ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে যেসব মৌলিক পরিবর্তন আসছে সেগুলোর মধ্যে আছে ভ্যাটের হারে পরিবর্তন, ভ্যাটের টার্নওভার ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি, ভ্যাটমুক্ত টার্নওভারের সীমা বাড়ানো ও কিছু পণ্যের বিপরীতে ভ্যাট আদায়ের জন্য বিশেষ স্কিম চালু করা।

যেসব পরিবর্তন আসছে : বার্ষিক টার্নওভারের সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে টার্নওভার ট্যাক্স হারও বাড়ানো হচ্ছে। আগামী বাজেটে এ হার ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হবে। বর্তমানে এ হার ৩ শতাংশ। ফলে ৩ কোটি টাকার বেশি যাদের টার্নওভার রয়েছে তাদের ১ শতাংশ বেশি হারে ভ্যাট দিতে হবে। সাধারণত বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোরই ৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার রয়েছে।

এর মধ্যে আছে পাইকারি পণ্য ব্যবসায়ী ও পণ্যের উৎপাদক খাত। এগুলোতে ভ্যাটের চাপ বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। এর প্রভাব পড়বে খুচরা পর্যায়ে। তখন খুচরা পর্যায়েও পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৩ কোটি টাকার নিচে যাদের বার্ষিক টার্নওভার রয়েছে, তাদের এ ট্যক্স দিতে হবে না। তারা নতুন হারে ভ্যাট প্রদান করবেন।

এছাড়া ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। মূলত ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনের অধীনে যারা প্যাকেজ ভ্যাট দিতেন, তাদের ছাড় দিতেই অব্যাহতির সীমা বাড়ানো হচ্ছে। এর আওতায় পড়ে বেশির ভাগ ছোট ব্যবসায়ী। আগামী বাজেটেও ছোট ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আগের চেয়ে আরও একটু বড় ব্যবসায়ীদেরও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে। ফলে পাড়া-মহল্লা, ফুটপাত বা ছোট ছোট মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে না।

আরও জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে বর্তমানে প্রচলিত ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা ওঠে যাবে। চালু হবে বাজারভিত্তিক ভ্যালু প্রথা। এর ফলে বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়বে। বর্তমানে এলপি গ্যাসের প্রতি কেজির ট্যারিফ ভ্যালু আছে ৩ টাকা।

অর্থাৎ এ ৩ টাকার ওপর ভোক্তাকে ভ্যাট দিতে হয়। এ প্রথা ওঠে গিয়ে বাজারভিত্তিক প্রথা চালু হলে এর প্রকৃত উৎপাদন খরচের ওপর ভ্যাট আরোপিত হবে। তখন এর ওপর ভোক্তাকে ভ্যাট দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই তখন ভ্যাটের পরিমাণ বাড়বে।

ফলে বাড়বে এলপি গ্যাসের দামও। সব খাতে পণ্যের এ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে অত্যাবশ্যকীয় কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ স্কিম চালু করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেল, ওষুধসহ বেশ কিছু পণ্য ও সেবা। এর বিপরীতে ভ্যাট আদায়ের জন্য আলাদা একটি স্কিম প্রণয়ন করা হবে। এ স্কিমের আওতায় ভ্যাট আদায় করা হবে। এনবিআর এখন এ স্কিমটি প্রণয়ন করছে। এটি এমন ভাবে করা হবে যাতে আবশ্যকীয় কিছু পণ্য ও সেবার দাম না বাড়ে। পেট্রোলিয়াম ও ওষুধ ছাড়া এ বিশেষ স্কিমে আরও নতুন নতুন পণ্য যোগ করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

নতুন আইনে ব্যাটের হার ১৫ শতাংশ রাখা হলেও এটি পরিবর্তন করা হবে। তবে নতুন আইনে ভ্যাটের ইউনিক হার থাকবে ১৫ শতাংশই। এ হারে যারা ভ্যাট দেবেন বছর শেষে চূড়ান্ত হিসাবে বাড়তি ভ্যাট দিয়ে থাকলে তারা রিবেট পাবেন। ভ্যাটের অন্য হারগুলো হবে ৫ শতাংশ, সাড়ে ৭ শতাংশ ও ১০ শতাংশ। এ হারে যারা ভ্যাট দেবেন তারা কোনো রিবেট পাবেন না।