ব্যবসায়ীরা আগামী অর্থবছরেই ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) আইন ২০১২ বাস্তবায়নে রাজি আছে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহযোগিতা পাচ্ছে না। গত বুধবার দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে এ কথা জানিয়ে এনবিআরে চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে গত ২৭ এপ্রিলও এফবিসিসিআই থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ব্যবসায়ীরা আইনটির কোন কোন ধারার সংশোধন চেয়েছে তা আবারও স্পষ্ট করে জানানো হয়। এনবিআর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সহযোগিতা না করার অভিযোগ ঠিক নয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই আইনটির অনেক ধারা ঠিক করা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সহযোগী। তাদের নিয়েই ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়ন করা হবে। ভ্যাট আইন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না, এটা ঠিক নয়। দুই বছর ধরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে আইনটিতে ভ্যাটের হার, ভ্যাটমুক্ত সীমা, টার্নওভারসহ অনেক বিধান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করা হয়েছে। বাজেটের এখনো প্রায় এক মাস বাকি। আলোচনার সুযোগ এখনো আছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগেই যদি এনবিআর সব জানিয়ে দেয় কোন পণ্যে কত ভ্যাট বসবে তাহলে অনেকে কালোবাজারি করবে। অনেকে পণ্য মজুদ করে ফেলবে। তাই বিতর্ক এড়াতে ভ্যাট আইনের কিছু ইস্যু বাজেটের মাধ্যমে জানানো হবে। পৃথিবীর কোনো দেশেই বাজেটের আগে সব বিষয় জানানো হয় না।
২০১২ সালে আইনটি চূড়ান্ত করা হয়। তখন থেকেই ব্যবসায়ীরা আইনটির কিছু ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। সাত বছর ধরে আইনটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি সরকার। গত অর্থবছরের আগেরবার তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যবসায়ীদের পাশ কাটিয়ে আইনটি প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু সংশোধন ছাড়া আইনটি বাস্তবায়নে রাজি হয়নি ব্যবসায়ীরা। তারা আন্দোলনে নামে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে আইনটির বাস্তবায়ন স্থগিত করেন।
আগামী অর্থবছরে আইনটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আ হ ম মুস্তফা কামাল ভ্যাট আইন ২০১২ সম্পর্কিত ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়ে আলোচনায় বসেন। গত ৩১ মার্চ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রায় সাত বছর থেকে ঝুলে থাকা আইনটির অমীমাংসিত অনেক ইস্যুর সমাধান করেন। একক হারের পরিবর্তে একাধিক হার, ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩৬ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা, টার্নওভার করের সীমা তিন কোটি টাকা পর্যন্ত ৪ শতাংশ ভ্যাটসহ অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে ব্যবসায়ীদের অনেক দাবি, বিশেষ করে ভ্যাট আদায়ের পদ্ধতি, রেয়াতের পরিমাণ, কোন পণ্যে কী হারে ভ্যাট হবে সেটা এখনো অমীমাংসিত।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আগামী অর্থবছরে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নে যেতে রাজি আছে। আইনটি সংশোধনে ব্যবসায়ীরা বারবার দাবি জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আইনটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছেন। আইনটির যেসব ধারা এখনো সংশোধন হয়নি বা যে বিষয়গুলো আগামী দিনে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে এনবিআর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু বাজেট পেশের আর মাত্র কিছু দিন বাকি থাকলেও এনবিআর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বা আলোচনা করছে না।
গতকাল এনবিআরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, এফবিসিসিআই এ দেশের ৮৪টি চেম্বার এবং ৩৯৮টি অ্যাসোসিয়েশনকে নিয়ে কাজ করে। তাদের দাবি বা প্রয়োজন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তাই ব্যবসা সম্পর্কিত দেশের কোনো নীতি নির্ধারণে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু ভ্যাট আইন নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের মতামতের মূল্যায়ন করা না হলে আইনটি বাস্তবায়ন উপযোগী হবে না।
চিঠিতে বলা হয়, গত দুই বছরে ভ্যাট আইন ২০১২ নিয়ে বিভিন্ন সভা হলেও এনবিআর থেকে এফবিসিসিআইকে তা সরবরাহ করা হয়নি। বাজেট প্রস্তাব পেশের আগে ভ্যাট আইন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে একাধিক সভার প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয়নি। গত ২ মে ভ্যাট আইন ২০১২ সংশোধনে একটি সভার নোটিশ করা হলেও সভাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। ভ্যাট আইন সংশোধন ছাড়া বাস্তবায়ন করা হলে তা গণমানুষের জন্য ভালো হবে না। বাণিজ্য সহজীকরণ এবং রাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন বাস্তবায়ন হলে মূল্যস্ফীতি হবে। জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে।