মূল্য সংযোজন কর (মূসক) সংক্রান্ত ৯ হাজার ৯৭৭টি মামলায় আটকে আছে ২১ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকার রাজস্ব। এ হিসাব চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুসারে, ভ্যাট সংক্রান্ত আপিল কমিশনারেটে ২১টি, আপিল ট্রাইব্যুনালে ২৮৪টি, হাইকোর্ট বিভাগে ৩ হাজার ৪০৮টি, আপিল বিভাগে ২১৫টি, সার্টিফিকেট সংক্রান্ত ৩ হাজার ২৮১টি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ২১টি এবং অন্যান্য ১ হাজার ৩৫৪টি মামলার বিপরীতে এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আটকে আছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করে নিজেদের পকেটস্থ করে মামলা করেছে ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে ভ্যাট মামলা পরিচালনায় খুব একটা তৎপরতা নেই এনবিআরের। জানা গেছে, উচ্চ আদালতে রাজস্বসংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় এনবিআরের নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল নেই। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এসব মামলা পরিচালনা করে। এ কাজ সমন্বয়ের জন্য একজন সমন্বয়ক কর্মকর্তা পদায়ন করে এনবিআর। তবে ঘন ঘন সমন্বয়ক কর্মকর্তা পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে এসব রাজস্ব মামলা।
এনবিআরের শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভ্যাটদাতাদের বুঝিয়ে সচেতন করে ভ্যাট আদায়ের চেষ্টা করি। আবার যারা ফাঁকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ভ্যাটদাতা ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান মনে করে, তাদের কাছে যে পরিমাণ ভ্যাট চাওয়া হয়েছে, একসঙ্গে পরিশোধ করতে গেলে তা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তাই তারা মামলায় যায় এবং ভ্যাট দেওয়া আটকে দেয়। তারা জানে যে, মামলা করলে শুনানি, আপিলসহ নানান প্রক্রিয়ায় অনেক সময় পাবে। উদ্দেশ্য- সময়ক্ষেপণ করা।এদিকে চলতি অর্থবছরে মূসক বা ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ভ্যাটের কোনো নথি যাচাই-বাছাই করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের জন্য আর্থিক মূল্যের সীমা বাড়ানো হয়েছে। চলতি বাজেটে ছোট ছোট পদবির ভ্যাট কর্মকর্তাদের এ ধরনের ক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে অপেক্ষাকৃত ছোট পদবির ভ্যাট কর্মকর্তারা ভ্যাট ফাঁকি-সংক্রান্ত যে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারবেন। একদিকে এর সুবিধা হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমবে। অন্যদিকে অসুবিধা হলো বড় বড় ভ্যাটের নথি ছোটখাটো কর্মকর্তাদের কাছে আটকে থাকার প্রবণতা বাড়তে পারে। এর আগে ২০২১ সালে একইভাবে শুল্ক কর্মকর্তাদের এমন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল।
এদিকে প্রতিবছরই এনবিআরকে রাজস্ব আহরণের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। যদিও অর্থবছর শেষে তা আহরণ করা সম্ভব হয় না।এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর- এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিতেই পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ছিল আয়কর খাতে। আয়কর খাতে ঘাটতির পরিমাণ ৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্য ছিল ৪৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।অন্যদিকে এই ৫ মাসে আমদানি খাতে ৫১ হাজার ৫১০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। আমদানি খাতে লক্ষ্য ছিল ৫৬ হাজার ৭৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের। ফলে এ খাতে ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট খাতে ৫ মাসে ৫ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে এই খাতের জন্য লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ২২২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা।জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআরকে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। ফলে প্রতিদিন এনবিআরকে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা বেশি।