ঊর্ধ্বমূল্যের বোঝার ওপর ভ্যাটের আঁটি"'শুল্ক ও কর বৃদ্ধির প্রভাব শুরু পণ্য সেবায়যেসব পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধি ও টিসিবির সেবা বন্ধ গণবিরোধীশতাধিক পণ্য ও সেবায় বাড়ল শুল্ক-কর, অধ্যাদেশ জারি
No icon

ঊর্ধ্বমূল্যের বোঝার ওপর ভ্যাটের আঁটি"'

দেশে মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন চরম পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমার পরও ১২ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১০০ টাকার খাদ্যপণ্যের পেছনে এখন প্রায় ১১৩ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এমন উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করেই শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এর ফলে এসব পণ্য ও সেবায় খরচ বাড়তে যাচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে, ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির বোঝা ঘুরেফিরে ভোক্তাকেই বহন করতে হবে।গত বৃহস্পতিবার শুল্ক ও কর বাড়ানো সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে। এর আগে গত ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব পাস করা হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। জাতীয় সংসদ না থাকায় অধ্যাদেশ দিয়েই শুল্ক-কর বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আইএমএফের চাপে রাজস্ব বাড়াতে যেসব পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে তার মধ্যে আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতির মতো আমদানিকৃত ফল রয়েছে। এতে আসন্ন রোজায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পাত থেকে বাদ পড়তে পারে এসব ফল। সেই সঙ্গে রেস্তোরাঁর খাবারের বিলে ভ্যাট বাড়ায় খাবারের দামেও বেশি টাকা গুনতে হবে। শুধু তাই নয়, মিষ্টির দোকানেও ভ্যাট বাড়ানোয় মিষ্টান্ন পণ্য কিনে খেতে বাড়তি টাকা গুনতে হবে।খেজুর বাদে প্রায় সব ধরনের ফলে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে যা ২০ শতাংশ ছিল। শুধু তাই নয়, ফলের রস আমদানিতে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফল আমদানিকারকরা বলছেন, ফলের আমদানিতে আগে থেকেই শুল্কের চাপ রয়েছে। এখন শুল্ক আরও বাড়ানোয় দাম আরও বেড়ে যাবে। আগে একটু খরচ হলেও রোজায় সবাই খাবারের তালিকায় কম-বেশি ফল রাখতে পারতেন। এখন বর্ধিত শুল্কের প্রভাবে আসন্ন রোজায় ফলের দাম বেশি পড়বে।

কথা হলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এতদিন এক কেজি আপেলে যেখানে ডিউটি দিতে হয়েছে ৯৫ টাকা, এখন সেখানে ১১৫ টাকা দিতে হবে। মাল্টায় ডিউট যেখানে ৮৮ টাকা দিতে হতো, এখন ১১৩-১১৪ টাকা হবে। লাল আঙুরের ডিউটি কেজিতে ১০০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৫০ টাকা হবে। ফলে বাজারে এগুলোর দামও বেড়ে যাবে এবং ব্যবসাও কমে যাবে। আমদানিকারকরা বাধ্য হবেন আমদানি কমাতে। এতে এ খাতে কর্মসংস্থানও কমে যাবে।সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফলের ওপর এত হারে শুল্ক আরোপ কোথাও হয় না। আপেল, কমলার মতো ফলগুলো এখন শুধু বড়লোকের খাবারে পরিণত হচ্ছে। নিম্নবিত্ত দূরে থাক মধ্যবিত্তদেরই এসব ফল এখন কিনে খেতে কষ্ট হবে।রমজান মাসে রেস্তোরাঁগুলোতেও থাকে বাহারি পদের খাবারের আয়োজন। সাধ্যের মধ্যে এসব খাবারের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহও থাকে বেশি। কিন্তু ভ্যাট বাড়ানোর ফলে আসন্ন রোজায় রেস্তোরাঁ থেকে একটু সাধ করে মুখরোচক খাবার খাবেন তার পেছনেও আগের চেয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হবে। কারণ সব ধরনের রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এত দিন এই হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। পরিবার-পরিজন নিয়ে রেস্তোরাঁয় ইফতার কিংবা সেহরি খেতে এখন বেশি খরচ গুনতে হবে।0কথা হলে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, রাজস্ব বাড়াতে বিকল্প অনেক পথ থাকতে খাবারের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। কোনো আলোচনা ছাড়াই রেস্তোরাঁ ব্যবসাসহ বিভিন্ন পণ্যের ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এতে খাবারের দাম বাড়বে। গ্রাহকদের যেমন খরচ বাড়বে, তেমনি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।