প্রস্তাবিত বাজেটে প্রথমবারের মতো করের হার ভবিষ্যতাপেক্ষভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। করের হার ভবিষ্যতাপেক্ষ করায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর পরিকল্পনা সঠিকভাবে প্রণয়নে সক্ষম হবে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরের করহার বহাল রাখা হলে ভবিষ্যতাপেক্ষ বিষয়টি যথাযথ হতো।বর্তমান সময়ে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ জনগণের জীবনযাপনের ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই এই জনগোষ্ঠীর করদায় কমাতে তাদের করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা বিবেচনায় আনা হয়নি। এটি করা উচিত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে আমরা ট্যাক্স, ভ্যাট এবং কাস্টমস প্রশাসনের সমন্বয় এবং অটোমেশনের জন্য প্রস্তাব দিয়ে আসছি। এর মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজের দক্ষতা বাড়ানো এবং কর সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ করা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ ধরনের অটোমেশনের জন্য বরাদ্দ বা সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অনুপস্থিত।বেসরকারি তহবিলগুলোর অর্জিত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে হ্রাসকৃত আয়করের বিধান করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা হতে সরকারি তহবিলগুলোকে অব্যাহতি প্রদান করাসহ তাদের আয় করমুক্ত করার বিধান সরকারি ও বেসরকারি কর্মীদের মাঝে বৈষম্য তৈরি করবে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি এবং একক ব্যক্তি কোম্পানির করপোরেট করহার নগদ লেনদেনের শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে আড়াই শতাংশ কমিয়ে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে; যাকে সাধুবাদ জানাই। করহার কমানোর প্রস্তাব বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে আশা করা যায়।নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৮টি পণ্যের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইআরসিধারীদের আমদানি করা পণ্যমূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে উৎসে কর প্রদানের বিধান ব্যবসায়ের ব্যয় কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অনিবাসীদের আয় থেকে উৎসে কর কর্তন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে। আবার অতিরাষ্ট্রিক ব্যয় বা পরিশোধের ক্ষেত্রে যেমন বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্রের কোনো কর্তৃপক্ষ বরাবরে কোনো পরিশোধ, আন্তর্জাতিক বিপণন ব্যয় ও পণ্য উন্নয়ন ব্যয় ইত্যাদি থেকে উৎসে কর কর্তন করার প্রযোজ্যতা নেই। এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। কিন্তু সেবা প্রদানকারীদের উৎসে কর কমানো হয়নি। বর্তমানে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী একেক খাতে লাভজনকতা একেক রকম, যা বিবেচনায় না এনে উচ্চহারে উৎসে কর কর্তনের হার নির্ধারণের ফলে প্রকৃত করহারের তুলনায় কার্যকর করহার বেশি হয়।ন্যূনতম কর আয়কর আইনের একটি ব্যত্যয়। অর্থবিল-২০২৪ এ তেল ও গ্যাস কোম্পানি এবং কিছু নির্দিষ্ট শিল্প থেকে সংগৃহীত কর ন্যূনতম কর হিসেবে গণ্য হবে। আবার কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে গুঁড়া দুধ, অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, সিরামিক পণ্য ব্যবসায়কেও ন্যূনতম করের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মিষ্টি পানীয় প্রস্তুতকারকের মোট প্রাপ্তির ওপর ন্যূনতম করহার ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ের কার্যকর করহার বাড়বে। এতে শিল্পের বিকাশ, বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। কিন্তু ন্যূনতম কর প্রত্যর্পণযোগ্য বা সমন্বয়যোগ্য বিধানটি প্রশংসনীয়।